অবৈধ অভিবাসী তাড়ানোর নামে গত আট মাস ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে রীতিমতো অভিযান শুরু করেছে প্রেসিডেন্ট প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন। এই আবহে সেই ডোনাল্ড ট্রাম্পই এবার সুর বদল করলেন। চিনা শিক্ষার্থীদের জন্য দরজা খুলে দিচ্ছেন তিনি। কয়েকশো বা কয়েক হাজার নয়, ৬ লক্ষ চিনা শিক্ষার্থীকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করার অনুমতি দিলেন ট্রাম্প।
দ্বিতীয়বার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পরই বিদেশি তাড়াতে উদ্যোগী হয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই মতো হাতে-পায়ে-কোমরে বেড়ি পরিয়ে সেনার বিমানে তুলে ফেরতও পাঠিয়েছেন অবৈধ অভিবাসীদের। ভারতেও মার্কিন সেনার বিমান নামে। এমনকী ভারতীয়দের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।কিন্তু বছরের অর্ধেক পেরোতে না পেরোতেই কার্যত ইউটার্ন নিলেন ট্রাম্প। সোমবার হোয়াইট হাউসে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ট্রাম্প বলেন, 'আমি চারপাশ থেকে নানা কথা শুনতে পাই। বলা হয়, আমরা নাকি চিনা শিক্ষার্থীদের ঢুকতে দিচ্ছি না।আমরা চিনের শিক্ষার্থীদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসতে দেব। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, ৬ লক্ষ শিক্ষার্থী…এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু আমরা চিনের সঙ্গেই থাকব।'
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা
সম্প্রতি চিনকে শুল্ক আল্টিমেটাম দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, চিন যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিরল ভূ-চৌম্বকীয় পদার্থ রপ্তানি না করে, তাহলে দেশটির ওপর ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।সেই আল্টিমেটাম নিয়ে আলোচনার মধ্যেই চিনা শিক্ষার্থীদের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দরজা খোলার ঘোষণা করলেন ট্রাম্প। অন্যদিকে, ট্রাম্প এই ঘোষণা করার পরেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সবচেয়ে বেশি সমালোচনা করছেন ট্রাম্পের সমর্থকদের একাংশ। ট্রাম্পের সমর্থকদের সবচেয়ে বড় মঞ্চ ‘মাগা’ (মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন এর সংক্ষিপ্ত রূপ)-এর সিনিয়র নেতা লরা লুমের এই ঘটনাকে ট্রাম্পের ‘আমেরিকা-ফার্স্ট' নীতির সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ উল্লেখ করে এক্স বার্তায় বলেছেন, 'আমি আমার দেশে বেশি বেশি মুসলিম ও চিনাদের আগমনের জন্য ভোট দিইনি। কমিউনিস্ট দেশ থেকে আসা অভিবাসীরা এবং শরিয়াপন্থি নোংরা লোকজন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে মহান করবে না। দয়া করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে চিন বানাবেন না। মাগা আর অভিবাসী দেখতে চায় না।'
এদিকে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেসেন্টেটিভসের সদস্য এবং ট্রাম্পের সমর্থক মারজোরি টেইলর গ্রিন সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে লিখেছেন, 'চিনা শিক্ষার্থীদের কোনও ভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকার দেওয়া উচিত নয়, কারণ তারা চিনের কমিউনিস্ট পার্টির সমর্থক।' তবে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক। সোমবার ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লুটনিক বলেছেন, 'চিনা শিক্ষার্থীদের অনুমতি না দিলে দেশের ১৫ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তিসঙ্গত অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করছেন।'