এবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রোষানলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সারির সংবাদপত্র। মার্কিন সংবাদপত্র ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর বিরুদ্ধে ১৫০০ কোটি ডলারের মানহানির মামলা করলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি অভিযোগ করেছেন, প্রায় এক দশক ধরে সংবাদপত্রটি তাঁর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যে খবর প্রচার' করছে এবং এটি ‘র্যাডিক্যাল লেফট ডেমোক্র্যাট পার্টির ভার্চুয়াল মুখপাত্রে’ পরিণত হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লেখেন, ‘আজ আমি দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের বিরুদ্ধে ১৫ বিলিয়ন ডলারের মানহানি ও অপবাদের মামলা করতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি। এটি আমাদের দেশের ইতিহাসে অন্যতম নিকৃষ্ট ও অধঃপতিত সংবাদপত্র, যা র্যাডিক্যাল লেফট ডেমোক্র্যাট পার্টির একটি ভার্চুয়াল মুখপাত্রে পরিণত হয়েছে।’ রিপাবলিকান নেতা ট্রাম্পের অভিযোগ, নিউইয়র্ক টাইমস তার ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিসকে সমর্থন জানিয়ে সেই খবরটি পত্রিকার প্রথম পাতায় বিশেষভাবে ছেপেছে।ট্রাম্পের দাবি, এটি ছিল ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অবৈধ নির্বাচনী অনুদান।' তাঁর আরও অভিযোগ, সংবাদপত্রটি তাঁর পরিবার, ব্যবসা, ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ এবং ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন (মাগা)’ আন্দোলন-সহ গোটা জাতির বিরুদ্ধে অসত্য প্রচার চালিয়েছে। এছাড়াও নিউইয়র্ক টাইমসের সংবাদ প্রকাশনাকে ট্রাম্প অন্য লিবারেল মার্কিন গণমাধ্যম যেমন এবিসি ও সিবিএসের সমতুল্য বলে উল্লেখ করেন। তাঁর দাবি, এই সংবাদমাধ্যমগুলি দীর্ঘদিন ধরে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপব্যবহার ও আক্রমণ চালিয়ে আসছে, যা ‘একেবারেই অগ্রহণযোগ্য ও বেআইনি।'
সোশ্যাল মিডিয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও লেখেন, ‘আমি গর্বিত যে, এক সময়ের সম্মানিত এই পত্রিকাটিকে জবাবদিহির আওতায় আনছি, যেমনটা আমরা ভুয় সংবাদ প্রচারকারী নেটওয়ার্কগুলির বিরুদ্ধে করেছি-যেমন জর্জ স্লোপাডোপোলাস/এবিসি/ডিজনি এবং ৬০ মিনিটস/সিবিএস/প্যারামাউন্ট-এর বিরুদ্ধে আমাদের সফল মামলা। তারা জানত যে তারা একটি অত্যন্ত জটিল নথি ও ভিজ্যুয়াল বিকৃতির মাধ্যমে আমাকে ইচ্ছাকৃতভাবে ‘কলঙ্কিত’ করছে, যা প্রকৃতপক্ষে ছিল এক ধরনের বিদ্বেষমূলক মানহানি। তাই শেষ পর্যন্ত রেকর্ড পরিমাণ অর্থে এই মামলা মীমাংসা করা হয়।’ টাইমসকে আক্রমণ করে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, মার্কিন এই সংবাদপত্রকে দীর্ঘদিন ধরে তাঁকে ‘মিথ্যা ও মানহানিকরভাবে আক্রমণ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।' তিনি আরও লেখেন, ‘তারা বহুদিন ধরে পরিকল্পিতভাবে এই ধরনের অপব্যবহার চালিয়েছে, যা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য ও বেআইনি। নিউইয়র্ক টাইমসকে দীর্ঘদিন ধরে আমাকে মিথ্যা, কলঙ্কজনক ও মানহানিকরভাবে আক্রমণ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে এবং আজই সেটির ইতি ঘটছে! মামলা দায়ের করা হচ্ছে মহান ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে। এ বিষয়ে আপনাদের মনোযোগের জন্য ধন্যবাদ। মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন!’
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সংবাদমাধ্যম
চলতি বছরের শুরুতে, এবিসি নিউজ একটি মানহানির মামলার মীমাংসা করতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবিত গ্রন্থাগারের জন্য ১৫ মিলিয়ন ডলার দিতে রাজি হয়েছিল। সেই মামলার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন এবিসি নিউজের অ্যাঙ্কর জর্জ স্টেফানোপুলোস। তিনি একটি মামলায় ভুল করে ট্রাম্পকে ধর্ষণের জন্য দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন। পরে এবিসি নিউজ সেই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে একটি বিবৃতি দিয়েছিল। অন্যদিকে, সিবিএস-এর মূল সংস্থা প্যারামাউন্ট গ্লোবালও ট্রাম্পের সঙ্গে একটি মামলা নিষ্পত্তি করতে ১৬ মিলিয়ন ডলার দিতে রাজি হয়েছিল। ওই মামলাটি ট্রাম্পের তৎকালীন প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিসের একটি সাক্ষাৎকার নিয়ে করা হয়েছিল। সেই সময়ে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, ওই সাক্ষাৎকারকে ইচ্ছাকৃত ভুলভাবে দেখানো হয়েছিল।