যুদ্ধ-পরবর্তী গাজাকে পর্যটন কেন্দ্র বানানোর পরিকল্পনা করছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন।এমনটাই দাবি করা হয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে।সূত্রের খবর, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের মধ্যে গাজার জন্য একটি যুদ্ধ পরবর্তী পরিকল্পনা প্রচারিত হচ্ছে। কমপক্ষে এক দশক ধরে যুদ্ধবিধ্বস্ত ছিটমহলটি পরিচালনা করা, গাজার জনসংখ্যার অস্থায়ী স্থানান্তর এবং গাজাকে পর্যটন কেন্দ্র এবং উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে পুনর্নির্মাণ করা।
ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, ৩৮ পৃষ্ঠার একটি প্রসপেক্টাস অনুসারে, গাজার ২০ লক্ষ মানুষ ‘স্বেচ্ছায়’ অন্য দেশে চলে যাবে অথবা পুনর্গঠনের সময় অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ এলাকায় যাবে।এর আগে রয়টার্স জানিয়েছিল, প্যালেস্তাইনবাসীদের থাকার জন্য গাজার ভেতরে এবং সম্ভবত বাইরে ‘হিউম্যানিটেরিয়ান ট্রানজিট এরিয়া’ নামে বৃহৎ আকারের শিবির নির্মাণের প্রস্তাব রয়েছে। বিতর্কিত মার্কিন ত্রাণ বিতরণ গোষ্ঠী 'গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন' বা জিএইচএফ এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেউ জমির মালিক হলে তাকে তাদের সম্পত্তি পুনর্নির্মাণের অধিকারের বিনিময়ে একটি ‘ডিজিটাল টোকেন’ দেওয়া হবে। যে প্যালেস্তাইনবাসী চলে যাবে তাদের চার বছরের ভাড়া মেটাতে পাঁচ হাজার ডলার নগদ এবং ভর্তুকি দেওয়া হবে। তাদের এক বছরের খাবারও দেওয়া হবে।
এই পরিকল্পনাটির নাম ‘গাজা পুনর্গঠন, অর্থনৈতিক ত্বরণ এবং রূপান্তর ট্রাস্ট, বা গ্রেট ট্রাস্ট।’ এটি জিএইচএফ তৈরি করেছে। এই জিএইচএফ হচ্ছে সেই প্রতিষ্ঠান যেটি ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে এবং গাজায় খাদ্য সহায়তা পৌঁছনোর জন্য বেসরকারি মার্কিন নিরাপত্তা ও সরবরাহ সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করে। আগস্টের শুরুতে, রাষ্ট্রসংঘ জানিয়েছিল, ২০২৫ সালের মে মাসে জিএইচএফ কাজ শুরু করার পর থেকে গাজায় সাহায্য পেতে গিয়ে এক হাজার জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই জিএইচএফ সাইটের কাছে কর্মরত ইজরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছে। তবে হোয়াইট হাউস এবং মার্কিন বিদেশ দফতর তাৎক্ষণিকভাবে এই প্রতিবেদনের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। তবে গাজা পুনর্নির্মাণের পরিকল্পনাটি ট্রাম্পের পূর্ববর্তী মন্তব্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রকাশ্যে বলেন, 'মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গাজা উপত্যকার দখল নেবে এবং আমরা সেখানে কিছু কাজও করব।' এদিকে, গত শুক্রবার গাজা উপত্যকায় বৃহৎ শহর গাজা সিটিকে ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ ঘোষণা করেছে ইজরায়েল। ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তারা সেখানে প্রাথমিক অভিযান শুরু করেছে। এছাড়া এখন থেকে গাজা সিটিতে ত্রাণ সহায়তার জন্য আরও কোন বিরতি দেওয়া হবে না বলেও জানিয়েছে আইডিএফ। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইজরায়েলের হামলায় মোট নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩ হাজার ২৫ জন, যাদের বেশির ভাগই মহিলা ও শিশু। এছাড়াও আহতের সংখ্যা বেড়ে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৪৯০ জনে দাঁড়িয়েছে।