ই২০ পেট্রোল বা ২০ শতাংশ ইথানল মিশ্রিত পেট্রোল ব্যবহারের কাজ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সম্প্রতি কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন আইনজীবী অক্ষয় মালহোত্রা। সোমবার সেই জনস্বার্থ মামলা খারিজ করে দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
সোমবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বি.আর গাভাই এবং বিচারপতি কে বিনোদ চন্দ্রনের একটি বেঞ্চ এই মামলার শুনানি হয়। পেট্রোলে ২০ শতাংশ ইথানল মেশানো বা ই২০ পেট্রোলের খবর ঘোষণার পর থেকেই অনেকেই এই পেট্রোল নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন। প্রচুর যানবাহন এমনভাবে ডিজাইন করাই নয় যা ২০ শতাংশ মিশ্রিত পেট্রোল নিয়ে চলতে পারে। আইনজীবী অক্ষয় মালহোত্রা তাঁর জনস্বার্থ মামলায় এই বিষয় নিয়েই অভিযোগ জানিয়েছেন।তাঁর আবেদন অনুযায়ী, লক্ষ লক্ষ দৈনন্দিন মোটরচালক পাম্পে অসহায় হয়ে পড়েছেন। তাঁদের যানবাহনের জন্য অনুপযোগী জ্বালানি কিনতে বাধ্য করা হয়েছে। সমস্ত পেট্রোল পাম্পে ইথানল-মুক্ত (ই০) পেট্রোলের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার জন্য পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রণালয়ের কাছে নির্দেশনা চাওয়া হয় এই আবেদনে।তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র ২০২৩ সালের এপ্রিলের পরে তৈরি যানবাহনগুলিই ই২০ পেট্রোলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। একটি প্রতিবেদনের উল্লেখ করে বলেন যে ই২০ পেট্রোল ব্যবহারের ফলে জ্বালানি দক্ষতা ৬ শতাংশ কমে গেছে।
এরপরেই আইনজীবীর আবেদনের বিরোধিতা করে ভারতের অ্যাটর্নি জেনারেল আর ভেঙ্কটরামানি বলেন, ই২০ নীতি দেশের আখ চাষীদের উপকার করছে এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করছে। ভারতের কী ধরণের জ্বালানি ব্যবহার করা উচিত, তা কি দেশের বাইরের লোকেরা ঠিক করে দেবে? অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য শোনার পরেই প্রধান বিচারপতি বি.আর গাভাই জনস্বার্থ মামলা খারিজ করে দেন।
ই২০ পেট্রোল নিয়ে বেশিরভাগ পেট্রোল যানবাহন ব্যবহারকারীই বর্তমানে চিন্তায়। অনেকেই দাবি করছেন, এই পেট্রোল গাড়ি ও বাইকের মাইলেজ কমিয়ে দেবে। এমনকী ইঞ্জেনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশে জং ধরার মতো সমস্যাও দেখা দেবে।কিন্তু এই ধরনের আশঙ্কাকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে খারিজ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু কেন এই পেট্রোল চালু করেছে সরকার? অন্য দেশ থেকে আমদানি করা তেলের ওপর নির্ভরতা কমানো, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস এবং কৃষকদের থেকে উৎপাদিত আখ, ভুট্টার ব্যবহার বাড়ানো এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য। পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই ধরনের আশঙ্কার কোনও ভিত্তি নেই। এর কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণও নেই। কেন্দ্র জানিয়েছে, যে সব গাড়ি মূলত ‘ই১০’ পেট্রলের জন্য তৈরি, কিন্তু পরে তাতে ‘ই২০’ ভরা হয়েছে, সেগুলিতে গতি মাত্র ১-২ শতাংশ কমতে পারে। অন্যান্য যানবাহনের ক্ষেত্রে গতি হ্রাস হয়ে প্রায় ৩-৬ শতাংশ হতে পারে। তবে আরও ভাল ইঞ্জিন লাগালে এবং ‘ই২০’-র সামঞ্জস্যপূর্ণ যন্ত্রাংশের ব্যবহার করলে, গতি নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে। ভারতের গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির সংগঠন সোসাইটি অব ইন্ডিয়ান অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স (সিয়াম) জানিয়েছে, উন্নত মানের যন্ত্রাংশ-সহ ‘ই২০’ পেট্রলের সামঞ্জস্যপূর্ণ গাড়ি ২০২৩ সালের এপ্রিল মাস বাজারে থেকে পাওয়া যাচ্ছে।