'দেবতাকেই কিছু করতে বলুন।' মধ্যপ্রদেশের ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট খাজুরাহোর জাভরি মন্দিরে ভগবান বিষ্ণুর সাত ফুট উঁচু মূর্তি 'পুনর্নির্মাণ এবং পুনর্স্থাপনের' আর্জিতে দায়ের জনস্বার্থ মামলা খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ইউনেস্কোর ‘বিশ্ব ঐতিহ্যস্থল’ মর্যাদাপ্রাপ্ত খাজুরাহো মন্দির কমপ্লেক্সে বিষ্ণুমূর্তি প্রতিষ্ঠার আবেদন জানানো জনস্বার্থ মামলাকে শীর্ষ আদালত ‘প্রচারের স্বার্থে মামলা’ বলেছে।
খাজুরাহো মন্দির কমপ্লেক্সে জভারি মন্দিরে ভগবান বিষ্ণুর একটি প্রাচীন ভগ্নপ্রায় মন্দির রয়েছে। মোঘল আমলে বিষ্ণুর মূর্তি ভাঙা হয়েছিল বলে অভিযোগ। খাজুরাহোর সংরক্ষিত পুরাতন অংশে আছে সেই জভারি মন্দির। ওই মন্দিরে ভগবান বিষ্ণুর সাত ফুট উঁচু মূর্তি ‘পুনর্নির্মাণ এবং পুনর্স্থাপনের’ আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন রাকেশ দালাল। মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি বিআর গবই এবং বিচারপতি কে বিনোদ চন্দ্রনের বেঞ্চ সরাসরি সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। সেই সঙ্গে বিষ্ণুর সাত ফুট উঁচু মূর্তি ‘পুনর্নির্মাণ এবং পুনর্স্থাপনের’ আর্জি খারিজ করে প্রধান বিচারপতি আবেদনকারী পক্ষের উদ্দেশে বলেছে, ‘এটি সম্পূর্ণ পাবলিসিটির জন্য দায়ের করা আবেদন। এবার আপনাদের দেবতাকেই নিজের জন্য কিছু করতে বলুন।আপনি বলছেন আপনি বিষ্ণুর দৃঢ় ভক্ত, তাহলে গিয়ে প্রার্থনা করুন এবং ধ্যান করুন।' এছাড়াও তিনি যোগ করেন যে খাজুরাহো এসিআই-এর অধীনে একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান, এবং মূর্তির পুনর্নির্মাণের জন্য এসিআই-এর অনুমতি প্রয়োজন। আদালতের কথায়, 'এখনকার মধ্যে, যদি আপনি শৈবধর্মের বিরোধী না হন, তাহলে সেখানে গিয়ে পূজা করতে পারেন-খাজুরাহোতে শিবলিঙ্গের একটি খুব বড় মূর্তি আছে, যা সবচেয়ে বড়গুলোর একটি।’
আরও পড়ুন-সান্ত্বনা পুরস্কার! হ্যান্ডশেক বিতর্কে ইউ-টার্ন ICC-র, সাময়িক স্বস্তি পাকিস্তান শিবিরে
অন্যদিকে, ওই মন্তব্য প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিয়েছেন বিনীত জিন্দাল নামের এক আইনজীবী। নিজেকে ‘সনাতন ধর্মের অনুসারী’ বলেও পরিচয় দিয়েছেন তিনি। ওই আইনজীবীর দাবি, সুপ্রিম কোর্টের এই মন্তব্য ‘হিন্দুদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত’ করেছে। তাই ওই মন্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতিকে বলে দাবি করেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে লেখা ওই চিঠির একটি কপি রাষ্ট্রপতির কাছেও পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিনীত জিন্দাল। এর আগে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনকারী রাকেশ দালাল জানিয়েছিলেন, জাভরি মন্দিরে ভগবান বিষ্ণুর একটি প্রাচীন ভগ্নপ্রায় মন্দির রয়েছে। কিন্তু খাজুরাহো মন্দির কমপ্লেক্সটি ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (এএসআই)-এর তরফে ‘সংরক্ষিত অঞ্চল’ হিসেবে ঘোষিত। ফলে সেখানে নতুন কোনও নির্মাণ সম্ভব নয়। নিজেকে একজন ‘বিষ্ণুভক্ত’ বলে দাবি করে রাকেশ শীর্ষ আদালতের কাছে জাভরি মন্দিরের মন্দিরটি ‘পুনর্নির্মাণ এবং পুনর্স্থাপনের’ আর্জি জানান।
আরও পড়ুন-সান্ত্বনা পুরস্কার! হ্যান্ডশেক বিতর্কে ইউ-টার্ন ICC-র, সাময়িক স্বস্তি পাকিস্তান শিবিরে
খাজুরাহোর ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। এই মন্দিরগুলি ৯৫০-১০৫০ খ্রিস্টাব্দে চন্দেল রাজাদের আমলে নির্মিত হয়েছে এবং নাগর স্থাপত্যের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। জাভরি মন্দিরটি খাজুরাহো গ্রুপের অংশ, যা ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় রয়েছে। এখানকার ভাস্কর্য এবং মূর্তিগুলি হিন্দু ধর্মের গভীর দার্শনিকতা প্রকাশ করে। কিন্তু ঐতিহাসিক আক্রমণ, বিশেষ করে মুঘল যুগে, অনেক মূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।