মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক অবাধ বাণিজ্য বৈঠক আপাতত হচ্ছে না। কিন্তু তার কোনও বিরূপ প্রভাব পড়ল না শেয়ার বাজারে। বরং প্রধানমন্ত্রীর জিএসটি কাঠামোয় বড়সড় পরিবর্তন সংক্রান্ত দাবির পরেই সপ্তাহের প্রথম ট্রেডিং সেশনে বুল রানের আবির্ভাব ঘটল দালাল স্ট্রিটে।সোমবার বাজার খোলার পর হাজার পয়েন্ট উঠল সেনসেক্স। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নিফটি৫০ও।
সোমবারের বাজার রিপোর্ট বলছে, এদিন বাজার খোলার কয়েক মিনিটের মধ্যে দেখা যায় সেনসেক্স ১১০০ পয়েন্টের কাছাকাছি বেড়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আরও উপরে উঠতে থাকে। সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, ৭০৫.৯৬ পয়েন্ট বেড়ে সেনসেক্স পৌঁছে গিয়েছে ৮১,৩০৩.৬২ পয়েন্টে। পিছিয়ে নেই নিফটিও। রিপোর্ট বলছে, ২৬৪.৭০ পয়েন্ট বেড়েছে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ বা নিফটির সূচক। যার জেরে বেড়ে নিফটি পৌঁছে যায় ২৪,৮৯৬ তে। বিএসই-র মিডক্যাপ ইনডেক্স এবং স্মল ক্যাপ ইনডেক্সও অনেকখানি বেড়েছে।সকালের ট্রেডে বেঞ্চমার্ক সূচকের উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে গাড়ি এবং ভোগ্যপণ্যের কোম্পানিগুলির শেয়ারে। ব্যাপক উত্থান দেখা গিয়েছে, অশোক লেল্যান্ড, ভোল্টাস, হুন্ডাই মোটর ইন্ডিয়া, হিরো মোটো, মারুতি সুযুকির শেয়ারে। শুধু তাই নয়, সকলকে চমকে দিয়ে বেড়েছে টাকার দামও। রিপোর্ট বলছে, ডলারের বিপরিতে টাকার দাম ২০ পয়সা বেড়ে হয়েছে ৮৭.৩৯ টাকা।
গত কয়েক সপ্তাহের ঝিমুনি ভাব কাটিয়ে স্টক মার্কেটের তেজি হওয়ার পিছনে বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) কাঠামোতে একটি বড় ধরনের সংস্কারের ঘোষণা। দ্বিতীয়ত, ১৯ বছর পরে আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন সংস্থা এসঅ্যান্ডপি-র ভারতের ক্রেডিট রেটিং বাড়ানো। এই দুই ঘটনার উপরে ভর করে সপ্তাহের প্রথম দিনেই লাফিয়ে উঠেছে ভারতীয় শেয়ার বাজারের সূচক।স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লায় দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জিএসটি রিফর্মের কথা ঘোষণা করেছিলেন। দিওয়ালির আগেই জিএসটি-তে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। জিএসটি-র হার কমলে একাধিক নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সস্তা হতে পারে। যা ঘরোয়া বাজারকে চাঙ্গা করবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। তাই এই ঘোষণা স্বাভাবিক ভাবেই লগ্নিকারীর উৎসাহ বাড়িয়েছে।
অন্যদিকে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে ইতিবাচক অগ্রগতি বাজারকে প্রভাবিত করেছে। সম্প্রতি আলাস্কায় এই ইস্যুতে বৈঠক হয় ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিনের। পুতিনের সঙ্গে আলাস্কায় বৈঠকের পর ট্রাম্প জানিয়েছিলেন ভারত ও চিনের উপর চাপানো সেকেন্ডারি ট্যারিফ পর্যালোচনা করতে পারেন তিনি। ইউক্রেনে যুদ্ধ থামলে রাশিয়ার তেল কেনা নিয়ে ট্রাম্পের শুল্ক কোপ থেকে মুক্তি পেতে পারে ভারত। এরপর সোমবার ওয়াশিংটনে ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির বৈঠকের দিকেও নজর রয়েছে বিশ্বের। এর সঙ্গেই বাজারের উত্থানের নেপথ্যে রয়েছে বিশ্ব বাজারে অপরিশোধিত তেলের দামে পতনের প্রভাব। সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার তেল রপ্তানির উপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি থেকে সরে আসায় তেলের দাম কমেছে।