'জামিন পেলে তিনি ফের পালাতে পারেন।' ব্যবসায়ী নীরব মোদীর জামিনের আবেদন ফের খারিজ করে দিয়েছে লন্ডন হাইকোর্ট। এই নিয়ে পরপর ১০বার নীরবের জামিনের আর্জি খারিজ করল আদালত। ২০১৯ সাল থেকে ব্রিটেনের কারাগারে বন্দি আছেন নীরব মোদী। তাকে দেশে ফেরানোর আবেদন জানিয়েছে ভারত। সেই নিয়ে ব্রিটেনের আদালতে শুনানি চলছে।
আরও পড়ুন-পহেলগাঁও হামলার জন্য দায়ী পাক সেনাপ্রধানের দৃষ্টিভঙ্গি! বিস্ফোরক দাবি জয়শংকরের
বিচারপতি মাইকেল ফোর্ডহ্যাম রয়্যাল কোর্ট অফ জাস্টিসে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আবেদনকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে।’ লন্ডন হাইকোর্ট জানিয়েছে, অভিযোগ অনুযায়ী নীরব মোদী পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ককে এমন কিছু নথি ইস্যু করতে প্ররোচিত করেন, যা বিদেশি ব্যাঙ্কগুলো থেকে টাকা তোলার সুযোগ করে দেয়। বিচারপতি ফোর্ডহ্যাম আরও বলেন, ‘আদালত দেখেছে, প্রত্যার্পণ শুনানিতে আবেদনকারী অর্থ স্থানান্তরের কথা অস্বীকার করেননি, বরং তিনি জানিয়েছেন, যাঁরা টাকা পেয়েছেন এই অর্থ তাঁদের কাছে আইনি ভাবেই গিয়েছে।’ বিচারপতি আরও বলেন, ‘এছাড়াও ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুবাইয়ে একটি কম্পিউটার সার্ভারে থাকা প্রমাণ নষ্ট করা হয়। ওই সময় আবেদনকারী ব্রিটেনে ছিলেন।’ এরপরেই নীরব মোদীর জামিন খারিজ করে দিয়েছে আদালত।
চলতি সপ্তাহে আদালতের সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে সিবিআই।সেখানে বলা হয়েছে, 'নীরব দীপক মোদীর দায়ের করা নতুন জামিনের আবেদন লন্ডনের কিংস বেঞ্চ ডিভিশনের হাইকোর্ট অফ জাস্টিস খারিজ করে দিয়েছে। ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিসের আইনজীবী জামিনের যুক্তিগুলির তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন।' বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, 'সিবিআই নীরব মোদীর জামিন খারিজের ফলে প্রাপ্ত যুক্তিগুলি সফলভাবে রক্ষা করতে পেরেছে। নীরব মোদী ১৯ মার্চ ২০১৯ সাল থেকে ব্রিটেনের কারাগারে রয়েছেন।'
আরও পড়ুন-ট্রাম্পের রক্তচক্ষুতে হার্ভার্ডে পাঠরত ভারতীয় পড়ুয়াদের কী হবে? পড়লেন বিপাকে
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক থেকে লোন প্রতারণা মামলায় অভিযুক্ত হয়েছিলেন নীরব। ৬,০০০ কোটি টাকার জালিয়াতির মামলায় অভিযুক্ত তিনি। তাঁকে পলাতক অর্থনৈতিক অপরাধী হিসেবে ঘোষণা করেছে ভারত সরকার। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হওয়ার পরেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন। ইডি তাঁকে ‘পলাতক’ ঘোষণা করে। ২০১৯ সালে ব্রিটেনে গ্রেফতার করা হয়েছিল নীরবকে। সেই থেকে তিনি লন্ডনের জেলে বন্দি। নয়াদিল্লি প্রত্যর্পণের চেষ্টা চালালেও ঋণখেলাপি গুজরাতি ব্যবসায়ী দেশে ফিরতে নারাজ।
ব্রিটেনের আদালত জানিয়েছে, মোদীর বিরুদ্ধে টাকা নয়ছয়ের যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। নয়াদিল্লির অনুরোধে ব্রিটেনের হাইকোর্ট ইতিমধ্যেই তাঁর প্রত্যর্পণ অনুমোদন করেছে।২০২৪-এর ডিসেম্বরে, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন জানিয়েছিলেন, নীরব মোদী মামলার ১,০৫২.৫৮ কোটি টাকার সম্পত্তি সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিকে ফেরত দেওয়া হয়েছে।
চলতি বছরেই পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের (পিএনবি) আর্থিক তছরুপের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে হিরে ব্যবসায়ী মেহুল চোকসি। ভারত সরকারের অনুরোধেই বেলজিয়াম সরকার ওই পলাতক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে। অভিযোগ, ১৩ হাজার ৮৫০ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি করেছিলেন মেহুল। তিনি একা নন, এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আর এক ব্যবসায়ী নীরব মোদী। সম্পর্কে তিনি মেহুলের ভাগ্নে।