প্রয়াত অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের ম্যানেজার দিশা সালিয়ানের মৃত্যু ঘিরে ধোঁয়াশা যেন কাটছিল না গত পাঁচ বছর ধরে। দীর্ঘ তদন্তে নাম জড়িয়েছে শিবসেনা নেতা আদিত্য ঠাকরের। দিশার বাবা-সহ তাঁর কাছের মানুষদের দাবি ছিল হত্যা করা হয়েছিল তাঁকে। এবার মুম্বই পুলিশের তদন্তে জট খুলল দিশার মৃত্যুর রহস্যের। জানা গেল, আত্মহত্যা করেছিলেন সুশান্তের ম্যানেজার। আর এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই মুখ খুলেন উদ্ধব ঠাকরে পুত্র।
বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে আদিত্য ঠাকরে বলেন, ‘গত পাঁচ বছর ধরে, কয়েকজন ব্যক্তি আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করেছে। আমি তখনও তাদের কোনও জবাব দিইনি, এবং এখনও দেব না।’ এরপরেই মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা নীতেশ রানে কটাক্ষ করে বলেছেন, 'পিকচার আভি বাকি হ্যায়।' সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'যে খবর প্রকাশিত হচ্ছে তা ১৭ জুনের সিটের হলফনামার উপর ভিত্তি করে। এরপর দিশা সালিয়ানের বাবা এটিকে চ্যালেঞ্জ করে আরেকটি হলফনামা দাখিল করেছেন। তাই, মামলাটি এখনও শেষ হয়নি।' তিনি আরও বলেন, 'সিটের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে আদালতের পর্যবেক্ষণ ব্যাখ্যা করা উচিত নয়। দিশার বাবার অভিযোগগুলি গুরুতর এবং বিষয়টি বিচারাধীন। পরবর্তী শুনানি ১৬ জুলাই নির্ধারিত হয়েছে।'
রাজ্যের মন্ত্রী আরও বলেন, 'এটি রাজনীতির বিষয় নয়। দিশা সালিয়ানের বাবা তার মেয়েকে হারিয়েছেন। তিনি আদিত্য ঠাকরে এবং ডিনো মোরিয়ার নাম করেছেন। তিনি কি (দিশার বাবা) এখন রাজনীতিতে যোগ দেবেন?' শিবসেনা সাংসদ সঞ্জয় রাউতের কাছ থেকে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে রানে বলেন, 'দিশা সালিয়ানের জন্য ন্যায়বিচার দাবি করায়, আমি কেন ক্ষমা চাইব?' চলতি বছর মার্চ মাসে নতুন করে মেয়ের রহস্যমৃত্যুর তদন্ত দাবি করেন ম্যানেজার দিশা সালিয়ানের বাবা। তিনি দাবি করেছিলেন, মেয়ে যে আত্মহত্যা করেননি, সেটার প্রমাণও আছে তাঁর কাছে। অভিযোগ, দিশার মৃত্যুর নেপথ্যে হাত রয়েছে আদিত্য ঠাকরের। সেই মর্মেই উদ্ধব-পুত্রের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন দিশা সালিয়ানের বাবা। সেই অভিযোগনামায় আদিত্যর পাশাপাশি উল্লেখ রয়েছে, অভিনেতা ডিনো মোরিয়া, সূরজ পাঞ্চোলি এবং তাঁর নিরাপত্তরাক্ষী, মুম্বই পুলিশের প্রাক্তন উচ্চপদস্থ অফিসার পরমবীর সিং এবং রিয়া চক্রবর্তীর নামও।
অন্যদিকে, সম্প্রতি বোম্বে হাইকোর্টে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে মুম্বই পুলিশ। তদন্তে দাবি করা হয়েছে, পরিবারের অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পায়নি তদন্ত কর্মকর্তারা। দিশা সালিয়ান আত্মহত্যা করেছিলেন বলেই উল্লেখ করেছে তদন্তকারীরা। সতীশ সালিয়ানের অভিযোগ ছিল, দিশাকে গণধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই সমস্ত অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই বলে তদন্তের রিপোর্টে জানিয়েছে মুম্বই পুলিশ।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১৪ জুন। মুম্বইয়ের ফ্ল্যাট থেকে সুশান্ত সিং রাজপুতের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। সুশান্তের মৃত্যুর ঠিক এক সপ্তাহ আগে ২০২০ সালের ৮ জুন মৃত্যু হয়েছিল দিশার। বহুতলের আবাসনের ১৪ তলা থেকে পড়ে মৃত্যু হয় সুশান্তের ম্যানেজারের। দুজনের রহস্যমৃত্যুর পর সুশান্ত ও দিশাকে নিয়ে অনেক গুঞ্জন রটেছে। দিশার মৃত্যুর নেপথ্যের কারণ কী? সে নিয়ে সেসময় বিস্তর লেখালেখিও হয়। তবে তদন্তে নেমে সিবিআই জানতে পারে সুশান্ত এবং দিশার মৃত্যুর কোনও যোগসূত্র নেই। দিশার ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ধর্ষণ বা যৌন হেনস্থার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছিল পুলিশ। তাদের দাবি, পারিবারিক সমস্যা এবং কাজের চাপের কারণে মানসিক অস্থিরতা ভুগছিলেন দিশা। এই অবস্থায় কোনও সুরাহা না পেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন দিশা।