চলতি মাসেই দেশজোড়া বিক্ষোভের মুখে নেপালের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন কেপি শর্মা ওলি। ২০২৪ সালে শের বাহাদুর দেউবা সরকারের পতনের পর ফের ক্ষমতায় আসা ওলি এক বছরের মধ্যেই দেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, সম্পদ অপব্যবহার এবং কর্তৃত্ববাদী শাসনের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ জমতে থাকে। তবে চূড়ান্ত ধাক্কা আসে টানা কয়েক দিনের বিক্ষোভ থেকে, যেখানে নেতৃত্বে ছিল 'জেন জি' যুবসমাজ। বর্তমানে ধীরে ধীরে শান্ত হচ্ছে নেপাল। আর এই আবহে নিরাবতা ভাঙলেন সদ্য প্ৰাক্তন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি।শুক্রবার নেপালের সংবিধান দিবসে ফেসবুকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ওলি দেশের সংবিধান প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন। তিনি সংবিধানকে 'নেপালি জনগণের নিজেদের জন্য লেখা একটি ভবিষ্যতের রেখা' বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, 'জেন-জিদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ চলাকালীন অনুপ্রবেশ ঘটেছিল। যে সব ষড়যন্ত্রকারীরা এতে অনুপ্রবেশ করেছিল, তারা সহিংসতা উস্কে দেয় এবং আমাদের যুবকদের হত্যা করে। সরকার বিক্ষোভকারীদের গুলি করার নির্দেশ দেয়নি। পুলিশের কাছে নেই - এমন স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে গুলি চালানোর ঘটনা তদন্ত করা উচিত।' ৮ সেপ্টেম্বরের ওই সিংসায় ১৯ জন যুবক নিহত হন। ওলি দাবি করেন, বিক্ষোভে গোপন ষড়যন্ত্রকারীরা অনুপ্রবেশ করে হিংসাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, যার ফলেই এতগুলি প্রাণহানি ঘটেছে। ওলি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী (পদ) থেকে আমার পদত্যাগের পর সিংহ দরবার পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, নেপালের মানচিত্র পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, দেশের প্রতীক মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। সংসদ, আদালত, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক দলের অফিস, তাদের নেতা ও কর্মীদের বাড়িঘর, ব্যক্তিগত সম্পত্তি ছাই করে দেওয়া হয়েছে।'তিনি আরও বলেন, 'ঘটনার পেছনের ষড়যন্ত্র নিয়ে আমি আজ বেশি কিছু বলব না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুই নিজে নিজেই প্রকাশ পাবে। কিন্তু আমাদের অবশ্যই জিজ্ঞাসা করতে হবে, আমাদের জাতি কী গড়ে উঠছিল, নাকি ভেঙে ফেলা হচ্ছিল? এই ক্ষোভ কী কেবল একটি মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর বর্ণনা দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল?' প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জানান, 'আমাদের নতুন প্রজন্ম নিজেরাই সত্য বুঝতে পারবে। আর যারা দেশ ছেড়ে যাওয়া তরুণদের অবজ্ঞা করে, সময় তাদের মনে করিয়ে দেবে যে, তাদের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। অবশেষে নতুন প্রজন্ম সবকিছুই বাস্তবে দেখতে পাবে।' প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে ওলি জনসাধারণকে রাজনৈতিক বিভাজনের ঊর্ধ্বে উঠে সংবিধান রক্ষার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, 'আমাদের, নেপালিদের সকল প্রজন্মকে, সার্বভৌমত্বের উপর আক্রমণ মোকাবেলা করতে এবং সংবিধান রক্ষা করতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যদি সার্বভৌমত্ব আমাদের অস্তিত্ব হয়, তাহলে সংবিধান আমাদের স্বাধীনতার ঢাল।'কোথায় ছিলেন কেপি শর্মা ওলি? গত ৯ সেপ্টেম্বর প্রাণ বাঁচাতে নেপালের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে গোপন ডেরায় আশ্রয় নেন কেপি শর্মা ওলি। তাঁর হেলিকপ্টারে করে দেশ ছাড়ার জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে। তবে তিনি কোথায় গিয়েছেন? জানা যায়নি তখনও। অবশেষে প্রকাশ্যে এল সেই সত্য।সূত্রের খবর, বিক্ষোভের হাত থেকে বাঁচাতে ওলিকে নেপাল সেনার সুরক্ষায় একটি সামরিক ব্যারাকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। গোটা নেপাল জুড়ে যখন চলছে তাণ্ডব, তখন ৯ দিন সেনার নিরাপত্তায় নিরাপদে সেই ব্যারাকে কাটান ওলি। ৯ সেপ্টেম্বর আন্দোলন লাগামছাড়া হতেই প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। তখনই তাঁকে ওই ব্যারাকে স্থানান্তরিত করা হয়। সঠিক স্থান জানা না গেলেও ধারণা ব্যারাকটি কাঠমান্ডুর উত্তরে শিবপুরী জঙ্গল এলাকায় কোথাও অবস্থিত। সেনা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান ৯ দিন সামরিক সুরক্ষায় থাকার পর তাঁর ব্যক্তিগত বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।