'প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে মার্কিন পুলিশ এবং জেলা অ্যাটর্নিকে।' অপহরণের মিথ্যে অভিযোগে ৪৭ দিন জেলে কাটানোর পর দাবি তুললেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহেন্দ্র প্যাটেল। পরোপকার করতে গিয়ে তিনি পেয়েছিলেন অপরাধীর তকমা। মিথ্যে অপহরণের অভিযোগে টানা ৪৭ দিন জর্জিয়ার জেলে মারাত্মক যন্ত্রণা, দুর্ভোগ, মানসিক নির্যাতন সহ্য করেছেন মহেন্দ্র প্যাটেল। সম্প্রতি বেকসুর খালাস পাওয়ার পর প্রবল ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত।
ঘটনার সূত্রপাত
সূত্রের খবর, গত মার্চ মাসে ওয়ালমার্টে একটি খেলনা স্কুটার চালানোর সময় তা থেকে পড়ে যাচ্ছিল দু’বছরের এক শিশু। তা দেখতে পেয়ে তড়িঘড়ি তাকে গিয়ে বাইক থেকে তুলে নিয়েছিলেন মহেন্দ্র প্যাটেল(৬০)।এরপরেই ঘটে বড় বিপত্তি। শিশুর মা মহেন্দ্রকে অপহরণকারী ভেবে পুলিশে অভিযোগ জানান। আসলে এর আগের ঘটনা কারও নজরে না আসায় প্রত্যক্ষদর্শীরাও ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তিকে অভিযুক্ত ভাবেন। কিন্তু পরে সিসিটিভি ফুটেজ চেক করতেই প্রকাশ্যে আসে আসল ঘটনা। মহেন্দ্র বাচ্চাটিকে অপহরণ করতে নয়, বরং আঘাত থেকে বাঁচাতেই কোলে তুলে নিয়েছিলেন। সত্যিটা বাইরে আসতেই বেকসুর খালাস পান তিনি। কিন্তু ততদিনে ৪৭ দিন বিনা অপরাধে জর্জিয়ার জেলে কাটিয়ে ফেলেছেন মহেন্দ্র প্যাটেল।
এনডিটিভি-র এক সাক্ষাৎকারে জেলে কুখ্যাত অপরাধীদের সঙ্গে থাকার অভিজ্ঞতাকে নরক যন্ত্রণা বলে বর্ণনা করেছেন ওই ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তিনি জানান, 'জেলে ঠিক মতো খেতে পাইনি। আমার ওজন ১৭ পাউন্ড কমেছে। কতদিন ধরে ওষুধ পাইনি। আমি নিরামিষভোজী, তাই রুটি, বাদামের মাখন এবং দুধ খেয়ে বেঁচে ছিলাম।' শুধু তাই নয়, জেলে তাঁর উপরে অকথ্য মানসিক নির্যাতন করা হতো বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। মহেন্দ্র বলেন, ‘অন্যান্য বন্দিরা আমাকে হুমকি দিয়েছিল। একজন বলেছিল, যদি আমি তোমাকে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে মারধর করি, তাহলে তুমি কী করবে? আরেকজন তো আবার বিরক্তি না করা এবং সুরক্ষার জন্য পাঁচ লক্ষ ডলার দাবি করেছিল। কেউ কেউ বলেছিল আমি বাচ্চাদের কেটে খেয়ে ফেলব। আবার কেউ কেউ হুমকি দিয়েছিল যে আমি জেল থেকে বেরিয়ে গেলে আমাকে দেখে নেবে। জীবন্ত পুড়িয়ে মারবে।'
একদিকে যেমন জেলের ভিতরে মহেন্দ্র প্যাটেল নরক যন্ত্রণা সহ্য করছিলেন, অন্যদিকে তখন তাঁর পরিবারও সোশ্যাল মিডিয়ায় অপরিসীম দুর্ভোগ সহ্য করেছে। তিনি বলেন, 'সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে লেখেন যে আমাকে নির্বাসিত করা উচিত কিংবা জীবন্ত পুড়িয়ে মারা উচিত।' শেষ ওয়ালমার্টের সিসিটিভি ফুটেজ তাঁকে জেলের নরক যন্ত্রনা থেকে মুক্তি দিয়েছে। কিন্তু তারপরেও সন্তুষ্ট নন ওই ভারতীয় বংশোদ্ভূত। দেড় মাসের সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা মনে করেই জর্জিয়ার সরকার ও আইন বিভাগের কাছে অবিলম্বে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি তুলেছেন তিনি। কোনও ক্ষতিপূরণ নয়, বরং জবাবদিহি চান তিনি। মহেন্দ্র প্যাটেলের কথায়, ‘আমি পুলিশ এবং জেলা অ্যাটর্নির কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি করছি। তাদের অবশ্যই ব্যাখ্যা করতে হবে যে তারা কী পদক্ষেপ নেবে যাতে অন্য কোনও নিরপরাধ ব্যক্তির সঙ্গে এমন ঘটনা না ঘটে।’