নেপালে জেন জি বিক্ষোভ অব্যাহত। এরমধ্যেই ভারত-নেপাল সীমান্তের সোনাউলির কাছে ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের একটি বাসে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। এই হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। দুর্বৃত্তরা বেশ কয়েকজনের জিনিসপত্রও লুট করে নিয়ে যায়।অন্যদিকে, অগ্নিগর্ভ নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ভারতীয় দূতাবাস থেকে উদ্ধ্বার করা হয়েছে ভলিবল দলকে।
সূত্রের খবর, গত ৯ সেপ্টেম্বর কাঠমান্ডুর পশুপতিনাথ মন্দির দর্শন করে ফেরার সময় তীর্থযাত্রীদের সঙ্গে এই ঘটনাটি ঘটে। বাসটিতে উত্তরপ্রদেশের রেজিস্ট্রার্ড নম্বর ছিল। হামলায় সাত থেকে আটজন যাত্রী আহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। আটকে পড়া ভারতীয় যাত্রীদের উদ্ধারে নেপালি সেনা সদস্যরা এগিয়ে আসেন। বাস চালক কর্মী রামু নিশাদ জানিয়েছেন, 'জনতা কোনও উস্কানি ছাড়াই বাসটিকে লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়তে শুরু করে। আমরা পশুপতিনাথ মন্দিরে দর্শন করে ফিরছিলাম, হঠাৎ একদল জনতা আমাদের বাস ঘিরে ফেলে এবং আক্রমণ করে। যাত্রীদের মধ্যে মহিলা এবং বয়স্ক ব্যক্তিরাও ছিলেন, কিন্তু হামলাকারীরা তাঁদেরও রেয়াত করেনি।' তিনি আরও জানান, ভারত সরকার পরে তীর্থযাত্রীদের দিল্লিতে বিমানে করে নিয়ে যায়। ভারতে ফেরার পথেই বাসটিতে হামলা চালানো হয়েছিল।
ভলিবল দল উদ্ধার
সোশ্যাল মিডিয়ায় উপরে নেপাল সরকারের নিষেধাজ্ঞা জারির প্রতিবাদে কাঠমান্ডুতে আন্দোলন শুরু করেন তরুণেরা। পরিস্থিতি দ্রুত অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে পুরো দেশে। পদত্যাগ করতে বাধ্য হন নেপালের রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পৌডেল এবং প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি আটকে পড়েছিলেন পোখরায় ফ্র্যাঞ্চাইজ ভলিবল লিগের সম্প্রচারকারী চ্যানেলের উপস্থাপিকা উপাসনা গিল। গত বুধবার সোশ্যাল মিডিয়ায় এক ভিডিওয় তিনি আর্জি জানান, তাঁকে যেন দ্রুত ভারতে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়। বলেছিলেন, ‘আমার নাম উপাসনা গিল। আমি ভারতীয় দূতাবাসের কাছে সাহায্যের আর্তি জানাচ্ছি। দয়া করে আমাকে সাহায্য করুন। পোখরায় আমি এখন রয়েছি।’পোখরার যে হোটেলে উপাসনা ছিলেন সেখানে বিদ্রোহীরা আগুন জ্বালিয়ে দেয়। ফলে জীবন বাঁচানোর জন্য তাঁকে হোটেল ছেড়ে পালাতে হয়। ফেলে আসেন সমস্ত জিনিসপত্র।
টিভি উপস্থাপিকা উপাসনা গিল সোশ্যাল মিডিয়ায় সাহায্যের জন্য আবেদন করার পরে ভারত সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। কাঠমান্ডুতে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস ভলিবল দলকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছে। তথ্য অনুসারে, দূতাবাস ক্রমাগত দলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল এবং তাদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় উপসনার আর্তি ছড়িয়ে পড়তেই সরকারি কর্তারা উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু হয়। অবশেষে শুক্রবার উদ্ধার করা হয় ভলিবল দলকে।
অন্যদিকে, নেপালে জেন জি গণঅভ্যুত্থানে বিচ্ছিন্ন হিংসাত্মক ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫১। এরমধ্যে উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের এক মহিলাও রয়েছেন। তবে তার মধ্যেই শুক্রবার সকাল থেকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে নেপাল। প্রধানমন্ত্রী বাছাই-সহ অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আলোচনাও চলছে পাশাপাশি। এদিন বেশ কিছু বাজারহাট খুলেছে। সরকারি বাস চলাচল শুরু হয়েছে। এমনকী যাঁরা বাইরে ছিলেন ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চালু হওয়ায়, তাঁরাও দেশে ফিরছেন।তবে সেনাবাহিনী কয়েকটি জেলায় এখনও কার্ফু ও নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে আগামী তিনদিনের জন্য। তারমধ্যেও ধীরে ধীরে জেগে উঠছে নেপাল। সরকারি যে ভবনগুলি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তার পরিবর্তে অন্য জায়গায় নিয়ে গিয়ে সেগুলির কাজ চালু করা হচ্ছে। রবিবার থেকে শুরু হবে স্কুল-কলেজ। যদিও ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় অশান্তি এড়াতে উৎসবকালীন ছুটি ঘোষণা করে দিয়েছে। খুলবে ভাইফোঁটার পর।