গ্রেটার নয়ডায় যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে দেশজুড়ে। রবিবার দুপুরেই বধূ হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত স্বামী বিপিন ভাটিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের হাত থেকে পিস্তল কেড়ে নিয়ে পালানোর সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছিল বিপিন। তখনই তাকে হাতেনাতে ধরে পুলিশ। সোমবারই ছেলেকে হাসপাতালে লুকিয়ে দেখতে যাওয়ার সময়েই মৃতার শাশুড়ি দয়াবতীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই আবহে গৃহবধূকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন প্রাক্তন আইপিএস অফিসার কিরণ বেদী।
আরও পড়ুন-বৃষ্টিতে প্লাবিত মরুরাজ্য! বাঁধ উপচে ২ কিমি লম্বা খাদ, আতঙ্কে গ্রামবাসীরা
সোমবার সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে কিরণ বেদী বলেন, 'যেভাবে তাঁকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল তা থেকে বোঝা যায় যে মধ্যযুগ থেকে আমাদের সমাজ ছেলেদের সম্পদের উৎস হিসেবে বিবেচনা করে আসছে, আর মেয়েরা সম্পদ নিয়ে চলে যায়। বিয়ের সময় মেয়েদের বলা হয় যে এখন থেকে এটি তোমার ঘর নয়, যেখানে তুমি যাচ্ছ সেটা তোমার ঘর। কিন্তু সেই ঘর প্রতিটি মেয়ের জন্য ঘর হয় না। মেয়েটি সেখানে থাকে কারণ তার বাবা-মা বলেছে যে এখন এটিই তার ঘর। তাহলে মেয়েরা কোথায় যাবে? এটি আমাদের সমাজের ভুল। এই কারণেই মেয়েদের বোঝা হিসেবে মনে করা হয়।' তিনি আরও বলেন, 'দুই বোনকে মারধর করা হচ্ছিল কিন্তু নিজেদের বাঁচাতে পারছিল না। কিন্তু তারা রোজগারও করছিল। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকদের এতে সমস্যা ছিল। আর এমন নয় যে বাবা-মা জানতেন না। তারা সবকিছু জানতেন কিন্তু তবুও তারা শ্বশুরবাড়ির লোকেদের দাবি পূরণ করতেন। তখন কেন তারা পুলিশের কাছে যাননি?' কিরণ বেদী জানান, 'আসলে বাবা-মা চাননি যে তাদের মেয়ে ঘরে ফিরে আসুক কারণ ছেলেরও বিয়ে না হতে পারে। পুরো বিষয়টি মানসিকতা পরিবর্তনের বিষয়। কিন্তু এই মানসিকতা পরিবর্তন করতে অনেক সময় লাগবে।'
আরও পড়ুন-বৃষ্টিতে প্লাবিত মরুরাজ্য! বাঁধ উপচে ২ কিমি লম্বা খাদ, আতঙ্কে গ্রামবাসীরা
২০১৬ সালের ১০ ডিসেম্বর ভাটি পরিবারের দুই ছেলে বিপিন এবং রোহিতের সঙ্গে নিকি এবং তাঁর দিদি কাঞ্চনের বিয়ে হয়। নিকির পরিবারের দাবি, বিয়ের সময়েই স্করপিয়ো গাড়ি, এনফিল্ড বাইক, নগদ, সোনা-সহ বিপুল জিনিস যৌতুক হিসেবে দেওয়া হয়েছিল। এরপরেও পণের দাবিতে দুই বোনের উপরেই অত্যাচার করা হতো। নিত্যদিনই মারধর করা হতো। গত বৃহস্পতিবারও নিকিকে মারধর করার পর গায়ে দাহ্য তরল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। যার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিল মৃত বধূ নিকির শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা। রবিবার দুপুরে ধৃত বিপিনকে নিয়ে একটি বোতলের খোঁজে যায় পুলিশ। ওই বোতলের দাহ্য তরল ঢেলেই নিকিকে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই সময়েই এক পুলিশের পিস্তল কেড়ে নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে বিপিন। তখন তার পায়ে গুলি করা হয়। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে লুকিয়ে ছেলেকে দেখতে আসে মা। সেই সময় নিক্কির শাশুড়িকে গ্রেফতার করে পুলিশ।