‘শক্তিহীন শান্তি কেবলই কল্পনামাত্র।' এভাবেই প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি ও সামরিক শক্তির গুরুত্বের উপর জোর দিলেন চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান। মহুতে আর্মি ওয়ার কলেজে দুই দিনের 'রণ সংবাদ' সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন সিডিএস। সেখানেই তিনি স্পষ্ট জানালেন, 'অপারেশন সিঁদুর' এখনও জারি রয়েছে।
মঙ্গলবার সিডিএস অনিল চৌহান বলেন, 'ভারত সব সময় শান্তির পক্ষে থেকেছে, আমরা শান্তিপ্রিয় দেশ। তবে কেবল শান্তিপ্রিয় হয়ে ওঠার সামর্থ্য ভারতের নেই।’ এরপরেই জেনারেল চৌহান স্পষ্ট ভাবে বলেন, 'আমি মনে করি শক্তিহীন শান্তি কেবলই এক কল্পনা। আমি একটি ল্যাটিন উক্তি বলতে চাই যার অনুবাদ, যদি তুমি শান্তি চাও, যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও। সত্যিকারের শান্তি তখনই সম্ভব, যখন তার পেছনে থাকে ক্ষমতা, দৃঢ়তা ও প্রতিপক্ষকে প্রতিরোধ করার সামর্থ্য।' তিনি আরও জানান, ভারত শান্তিতে বিশ্বাস করে, কিন্তু সে শান্তি রক্ষার জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী সেনা ব্যবস্থা এবং সব সময় প্রস্তুত থাকা। জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে দৃঢ় সামরিক ক্ষমতা অপরিহার্য বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সাম্প্রতিক পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সামরিক অভিযানের কথা উল্লেখ করে জেনারেল চৌহান বলেন, 'অপারেশন সিঁদুর ছিল একটি আধুনিক সংঘাত, যেখান থেকে আমরা অনেক শিক্ষা পেয়েছি, এবং এর বেশিরভাগই বাস্তবায়িত হচ্ছে, কিছু বাস্তবায়িত হয়েছে। অভিযান এখনও চলছে। আমরা এখানে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে আলোচনা করতে আসিনি। আমরা এখানে অপারেশন সিঁদুরের বাইরেও কিছু নিয়ে আলোচনা করতে এসেছি।' এরপরেই সিডিএস চারটি প্রধান প্রবণতা তুলে ধরেছেন যা ভবিষ্যতের সংঘাতগুলিকে সংজ্ঞায়িত করবে। তিনি বলেন, 'চারটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবণতা আমার পূর্বাভাস। প্রথমত, দেশ এবং সরকারগুলির মধ্যে শক্তি প্রয়োগের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এটি ঘটছে কারণ আজ রাজনৈতিক লক্ষ্যগুলি স্বল্পমেয়াদী সংঘাতের মাধ্যমে অর্জন করা যেতে পারে।দ্বিতীয় হল যুদ্ধ এবং শান্তির মধ্যে পার্থক্যের অভাব।বর্তমানে সমসাময়িক যুদ্ধ পাঁচটি সি-এর ধারাবাহিকতা- প্রতিযোগিতা, সংকট, সংঘাত, সংঘাত এবং যুদ্ধের মধ্যে যুদ্ধ।'
জেনারেল চৌহান আরও বলেন, 'তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল মানুষের গুরুত্ব। অতীতের যুদ্ধগুলিতে, ভূখণ্ড এবং আদর্শের কারণে, মানুষ এবং সেনাদের বলিদান করা হয়েছিল। চতুর্থ গুরুত্বপূর্ণ প্রবণতা যা নিয়ে আমরা বিতর্ক করতে পারি তা হল বিজয়ের ম্যাট্রিক্স এবং আমরা কীভাবে বিজয়কে উপলব্ধি করি। অতীতে, বিজয়ের ম্যাট্রিক্স সম্ভবত লোক এবং সরঞ্জামের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষতির দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হত।' সিডিএস বলেন, 'ভবিষ্যতের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য আমাদের বহু-ডোমেন স্তরে প্রস্তুত থাকতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, গোয়েন্দা, নজরদারি, পুনর্বিবেচনার স্তরে সমন্বয় প্রয়োজন। এছাড়া, সংঘাতের ক্ষেত্রে কেবল স্থল, জল, আকাশ নয়, সমুদ্রের অভ্যন্তরে এবং মহাকাশেও প্রস্তুতি প্রয়োজন। এই সমস্ত ক্ষেত্রেও সমন্বয় প্রয়োজন।' তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ডেটা বিশ্লেষণ, বিগ ডেটা, এলএলএম এবং কোয়ান্টাম প্রযুক্তির ব্যবহারকে অপরিহার্য বলে অভিহিত করেন। জেনারেল চৌহান বলেন, 'ভারতের মতো বিশাল দেশের জন্য, এই স্কেলের একটি প্রকল্পে সমগ্র দেশবাসীর অংশগ্রহণ প্রয়োজন।'