একদিকে বিএনপি-র চাপ, অন্যদিকে সেনার গুঁতো, সেইসঙ্গে রয়েছে আরও নানা সমস্যা। তার মধ্যেই এবার মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন, বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপর চাপ বাড়াল বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।
বামপন্থীদের দাবি হল, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন করাতে হবে। নানা অছিলায় নির্বাচন ফেলে রাখলে, বা লাগাতার পিছোলে, সেটা বরদাস্ত করা হবে না। নিজেদের দাবিদাওয়াগুলি সামনে রেখে শুক্রবার (২৩ মে, ২০২৫) বিকেলে ঢাকার পল্টন মোড়ে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ করে সিপিবি। তাদের কর্মসূচির শিরোনাম ছিল - 'কথিত মানবিক করিডরের নামে বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধে জড়ানোর চক্রান্ত ও চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রতিবাদ'! ঢাকা শহরের নানা প্রান্ত থেকে দলীয় নেতা ও কর্মীরা এই কর্মসূচিতে যোগ দিতে আসেন।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স) অন্তর্বর্তী সরকারকে রীতিমতো তুলোধনা করে বলেন, 'সরকার নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মানবিক করিডর দেবে। কার সঙ্গে কথা বলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে? দেশের জনগণকে বাদ দিয়ে করিডর দিয়ে দেবেন? অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে।'
রুহিন হোসেন সরাসরি ইউনুস প্রশাসনকে কাঠগড়ায় তুলে প্রশ্ন করেন, 'আপনারা কি নির্বাচিত সরকার? গণ–অভ্যুত্থানের ভিত্তিতে এসে আমরা অন্তর্বর্তী সরকার বানিয়েছি। সব দায়িত্ব আপনাদের নয়। ...নির্বাচনের নামে কালবিলম্ব করে আপনাদের আসল উদ্দেশ্য করিডর দেওয়া, বন্দর দেওয়া। তাই হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, আপনারা আলোচনার নামে নির্বাচনকে বিলম্ব না করে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচনের সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষণা করে, নির্বাচন কমিশন সংস্কার করে ২৪–এর আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করুন।' যদিও শনিবার বিকেল পর্যন্ত অন্তত ইউনুস প্রশাসনের তরফে বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করা হয়নি।
সিপিবির সভাপতি মহম্মদ শাহ আলম আবার ইউনুস প্রশাসনের মানবিক করিডরের প্রস্তাব নিয়ে আশঙ্কার বার্তা দেন। তিনি বলেন,'রাখাইনে মানবিক করিডর দিলে বাংলাদেশ দখল হয়ে যাবে। সরকার যদি সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে, সবাইকে নিয়ে দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। ...চট্টগ্রাম বন্দরের যে সক্ষমতা তার থেকে এখন বেশি সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। তাহলে কেন বিদেশিদের হাতে আমরা এ বন্দর তুলে দেব। সরকারের প্রতি আহ্বান থাকবে, মানবিক করিডর দিয়ে দেশকে হুমকির মুখে ফেলে দেবেন না।'
তাঁর খোলাখুলি দাবি, 'আমরা অতিসত্বর নির্বাচিত সরকার চাই। নির্বাচিত সরকার না এলে দেশের মানুষের জানমাল রক্ষা করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে না। আপনি দ্রুত নির্বাচন দিয়ে বিদায় নিন।'
তিনি আরও বলেন, 'ইন্টেরিম গভর্মেন্টকে এ দেশের ছাত্র-জনতা ও রাজনৈতিক দলগুলো ম্যান্ডেট দিয়েছে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার জন্য। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান থাকবে, দ্রুত নির্বাচন দিন। ন্যূনতম সংস্কার করে দেশের মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিন।'