বহু বছর ধরে তীব্র হাঁটুর ব্যথায় হুইলচেয়ারই ছিল ভরসা। ৬৬ বছর বয়সী তেমনই এক বাংলাদেশি রোগীনীকে নিজের পায়ে দাঁড় করাল মুকুন্দপুরের মণিপাল হাসপাতাল। অর্থোপেডিক বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও বিভাগীয় প্রধান চিকিৎসক সুতনু হাজরা তাঁর দুই হাঁটু প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচার করেন। তার পর থেকেই স্বচ্ছন্দে হাঁটাচলা করতে পারছেন ওই রোগী।
বহু বছর ধরে হাঁটুর তীব্র যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছিলেন সাবিনা (নাম পরিবর্তিত)। যার ফলে চলাফেরায় সম্পূর্ণ অক্ষম হয়ে পড়েছিলেন। ব্যথা কমানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরেই ওভার-দ্য-কাউন্টার পেইনকিলার খেতেন। যার ফলে ধীরে ধীরে তার কিডনি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কলকাতায় চিকিৎসা করাতে এলে তাঁর দুটি ধাপে হাঁটু প্রতিস্থাপন অস্ত্রোপচার করা হয়। যেহেতু রোগীর কিডনির সমস্যা ছিল, তাই অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে চিকিৎসা পরিকল্পনা করা হয়।
আরও পড়ুন - IVF পদ্ধতিতে জেনেটিক টেস্টিং এড়িয়ে গেলে কী ক্ষতি? আলোচনায় জিনোমের দুই চিকিৎসক
জটিলতায় সত্ত্বেও অস্ত্রোপচার অত্যন্ত সফল হয়। অস্ত্রোপচারের পরের দিনই রোগী ওয়াকারের সাহায্যে হাঁটতে সক্ষম হন – যা তিনি বহু বছর ধরে করতে পারেননি। বর্তমানে তিনি পর্যবেক্ষণে রয়েছেন এবং আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তার কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করার পরিকল্পনা রয়েছে।
অস্ত্রোপচারের সময় রোগীর কিডনি সুস্থ রাখার দায়িত্ব ছিল নেফ্রোলজি ও ট্রান্সপ্লান্ট ফিজিশিয়ান ঋতেশ কৌন্তিয়ার। তাঁর কথায়, ‘ওভার-দ্য-কাউন্টার পেইনকিলার ও বিকল্প ওষুধ কিডনির মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যখন এই রোগী হুইলচেয়ারে বসা অবস্থায় কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের জন্য আমার কাছে আসেন, তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিই, প্রথমে তার হাঁটুর অস্ত্রোপচার করানো প্রয়োজন যাতে ব্যথা ও চলাফেরার সমস্যা দূর হয়।’
আরও পড়ুন - IVF প্রক্রিয়ায় PGT আদৌ দরকারি? জেনেটিক টেস্টিং নিয়ে ভুল ধারণা ভাঙালেন চিকিৎসক
চিকিৎসক সুতনু হাজরার কথায়, ‘হাঁটু বা জয়েন্টের ব্যথা আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় মারাত্মক প্রভাব ফেলে, কিন্তু নিজের মতো দীর্ঘদিন ধরে ব্যথানাশক খেলে তা কিডনি, হার্ট ও পরিপাকতন্ত্রের অপূরণীয় ক্ষতি করতে পারে। এই রোগীর ক্ষেত্রেও এমনটাই ঘটেছে। শুরুতেই যদি অস্থি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া যেত, তাহলে হয়তো কিডনি বিকল হওয়ার পর্যায়ে পৌঁছাতেন না। বাইল্যাটারাল টোটাল নি রিপ্লেসমেন্টের পর আবার তিনি হাঁটতে পারছেন। সেটা আমাদের জন্য এক অনন্য তৃপ্তির মুহূর্ত।’