মালদা জেলার চাঁচল রাজবাড়ীর দুর্গা পুজো শুরু হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৩৫০ বছর আগে। প্রতিবছরের মত এই বছরও সতী ঘাটে ঘট ভরে কৃষ্ণা নবমী তিথি থেকে শুরু হল চাঁচল রাজ ঠাকুরবাড়ির সিংহ বাহিনীর পুজো। এই রাজবাড়ীর একদিকে মহকুমা আদালত অন্যদিকে কলেজ তৈরি হয়ে গেলেও আজও স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে প্রাচীন এই রাজবাড়ির পুজো।
সতের দশকের শেষ ভাগে উত্তর মালদহের একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চলের রাজা ছিলেন রামচন্দ্র রায় চৌধুরী। বাংলা ছাড়াও বিহারের কিছু অংশ এই রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল। রাজা একদিকে যেমন ছিলেন প্রজা দরদী অন্যদিকে তেমন ছিলেন ধর্মপ্রাণ একজন মানুষ।
কথিত রয়েছে, একবার রাজা দেবী চণ্ডীর স্বপ্নাদেশ পান। সেই স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পর তিনি মহানন্দার ঘাটে স্নান করতে যান এবং তখনই তাঁর হাতে উঠে আসে অষ্ট ধাতু নির্মিত চতুর্ভূজার মূর্তি। সেই মূর্তি হাতে নিয়ে তিনি দুই কিলোমিটার হেঁটে ফিরে আসেন নিজের রাজবাড়িতে। প্রতিষ্ঠা করেন মায়ের প্রতিমাকে। শুরু হয় মায়ের নিত্য পুজো।
(আরও পড়ুন: কোন মন্ত্রে শতশত বছর ধরে টিঁকে ভারতের মন্দিরগুলি? 'বিস্ময়' ফুটিয়ে তুলবে এই পুজো)
প্রথমে মহানন্দার পাড়ে মাটির খড় এবং খড়ের ছাউনি দিয়ে মন্দির তৈরি করা হয়েছিল, সেখানেই প্রথম শুরু হয়েছিল দুর্গাপুজো। পরবর্তী সময়ে বংশের অন্যতম রাজা শরৎচন্দ্র রায়চৌধুরীর নির্দেশে তৎকালীন ম্যানেজার সতীরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে দুর্গা দালান তৈরি করা হয়, ততদিনে অবশ্য জায়গাটির নাম পরিবর্তিত হয়ে রাখা হয়েছে পাহাড়পুর।
প্রাচীন প্রথা মেনে আজও সপ্তমী তিথিতে রাজবাড়ি থেকে দুর্গা দালানে নিয়ে আসা হয় মায়ের অষ্টধাতুর মূর্তিকে। দশমীতে ফের রাজ বাড়িতে ফিরে যান মা। অষ্টধাতুর মায়ের পাশাপাশি মাটির তৈরি মায়েরও পুজো করা হয়। টানা ১৭ দিন ধরে চলে এই পুজো। দশমীতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দেখানো লণ্ঠনের আলোয় দেবীর বিসর্জন হয়।
জানা যায়, একসময় সতীঘাটায় মহানন্দার পশ্চিম পাড়ে মহামারী দেখা গিয়েছিল, তখন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে দেবী স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন যেন গোধূলি লগ্নে বিসর্জনের সময় তাঁরা মাকে আলো দেখান। স্বপ্নাদেশ মেনে সেই বছর মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ বিসর্জনের দিন লন্ঠন হাতে পথ দেখিয়েছিলেন মাকে।
(আরও পড়ুন: পুজোয় মুখের উজ্জ্বলতা বাড়াতে খাদ্যতালিকায় রাখুন এই রস! কম খরচেই হবে বাজিমাত)
মাকে আলো দেখানোর পর থেকেই দূর হয়ে যায় সমস্ত মহামারী। তারপর থেকে আজও প্রতিবছর নিয়ম মেনে বিসর্জনের সময় মরা মহানন্দার নদীর পাড়ে সাহুগাছি এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ লন্ঠন দেখিয়ে মাকে নিয়ে যান। সেই দৃশ্য হয় দেখার মতো।
রাজবাড়ীর একদিকে কলেজ অন্যদিকে আদালত তৈরি হয়ে গেলেও একাংশে এখনও ঠাকুরবাড়ি রয়েছে, যেখানে প্রতিবছর ধুমধাম করে দুর্গাপুজো হয়। এলাকার মানুষ ছাড়াও বহু জেলার মানুষ এখানে ভিড় করেন প্রাচীন এই দুর্গাপুজো দেখতে।