মুক্তির জন্য প্রস্তুত বিবেক অগ্নিহোত্রীর বহু বিতর্কিত ছবি 'দ্য বেঙ্গল ফাইলস'। ৫ই সেপ্টেম্বর মুক্তির আগেই এই ছবিটি নিয়ে চলছে বিরোধিতা। কিছুদিন আগে পশ্চিমবঙ্গে এই ছবির ট্রেলার প্রদর্শনী বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। রোষের মুখে পড়তে হয়েছে ছবিতে অভিনয় করা বাঙালি অভিনেতা সৌরভ দাস, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়দের।
এবার পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য একটি দীর্ঘ বার্তার ভিডিয়ো শেয়ার করেছেন। ভিডিয়োতে বিবেক বলছেন, 'পশ্চিমবঙ্গের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী, এই ভিডিয়োটি আপনার জন্য। আমাদের ছবি 'দ্য বেঙ্গল ফাইলস' সারা বিশ্বে মুক্তি পেতে যাচ্ছে, কিন্তু সবাই বিশ্বাস করে যে হয়তো পশ্চিমবঙ্গে নিষিদ্ধ হবে এবং নিষিদ্ধ না হলেও হল মালিকরা আমাকে জানিয়েছে উপর এত রাজনৈতিক চাপ রয়েছে যে তা দেখানোর জন্য তাদের বিশাল মূল্য দিতে হবে এবং তাই তারা এটি দেখাতে ভয় পাচ্ছে। এই ভয়ে তারা আমাদের ট্রেইলারটি প্রেক্ষাগৃহে দেখায়নি। আর আমরা যখন একটি প্রাইভেট হোটেলে সেটা দেখাতে গেলাম, তখন আপনার পুলিশ কোনও কারণে সেই প্রদর্শনী আটকে দিল'।
বিবেক বলেন, ‘আপনার দলের কর্মীরাও ক্রমাগত এই ছবিটি নিষিদ্ধ করার দাবি করছেন এবং তারা আমাদের বিরুদ্ধে অনেক এফআইআর দায়ের করেছেন, এর পিছনে কোনও ভিত্তি নেই, তাই আমি আপনাকে হাতজোড় করে অনুরোধ করছি যে এই ছবিটি শান্তিপূর্ণভাবে মুক্তি দেওয়া হোক। প্রথমত, আপনারা ভারতের সংবিধানের শপথ নিয়েছেন এবং প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার রক্ষার শপথ নিয়েছেন। এই চলচ্চিত্রটি সিবিএফসি দ্বারা উত্তীর্ণ হয়েছে, যা একটি সাংবিধানিক সংস্থা এবং তাই এই চলচ্চিত্রটির শান্তিপূর্ণ মুক্তি নিশ্চিত করার দায়িত্ব নেওয়া আপনার কর্তব্য। দ্বিতীয়ত, ভারত বিশ্বের সেই দেশ যা দীর্ঘকাল ধরে নিপীড়িত ও দাসত্বের শিকার হয়েছে। নিপীড়িত হয়েছে আমাদের আত্মা, আমাদের সংস্কৃতির, আমাদের ধর্মও। ১২০০ বছর ধরে আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের ধর্ম, আমাদের আত্মপরিচয়, আমাদের শিল্পকে ছিন্নভিন্ন করা হয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে বেদনাদায়ক অধ্যায় হচ্ছে বেঙ্গল অ্যাকশন ডে ও নোয়াখালী গণহত্যা এবং এটা যদি না ঘটতো তাহলে হয়তো দেশভাগের মতো ঘটনা ঘটতো না’।
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের কথা বলা কি অপরাধ?’ পরিচালক জানান, 'বাংলা শুধু বেদনার নাম নয়, বাংলা এমন পবিত্রভূমি যেখান থেকে ভারতের নবজাগরণ শুরু হয়েছিল। বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, সুভাষচন্দ্র বসু সকলেই বাংলার মানুষ। ভারতে বাংলাই এমন ভূমি যা দু'বার বিভক্ত হয়েছে। হয়তো বাংলার মতো এত ত্যাগ আর কেউ দেয়নি, কিন্তু আজকের প্রজন্ম তা জানে না। আমাদের প্রজন্ম এই বেদনাদায়ক অধ্যায় সম্পর্কে জানতে না পারার কারণ কী? দেশের কথা বলা কি অপরাধ? আপনি যদি নিজেকে একজন প্রকৃত ভারতীয় হিসেবে ভাবেন, তাহলে এই ছবি নিষিদ্ধ হতে দেবেন না।'
সবশেষে বিবেক বলেন, 'আমি বিশ্বাস করি, অ্যাকশন ডে ও নোয়াখালী গণহত্যার মতো সত্যকে কেউ নিষিদ্ধ করতে পারবে না। বাংলার সত্যই ভারতের সত্য। এখন কথা না বললে কখন কথা বলবে? সত্যকে ভয় পেলে আয়না ভেঙে যায় না। আয়না ভাঙলেই চেহারা বদলায় না, তবু আপনি যদি মনে করেন হিন্দু ইতিহাসের সত্যি কথা বলা খোদ ভারতেই অপরাধ, তাহলে আমি অপরাধী…. আপনি আমাকে যা খুশি শাস্তি দিতে পারো। বন্দে মাতরম। ’
বাংলাতে ডাবিং করা হয়েছে দ্য বেঙ্গল ফাইলসের, আগামী ৫ই সেপ্টেম্বর মুক্তি পাওয়ার কথা এই ছবির।