দর্শকদের বরাবরই নতুন কিছু চমক দিয়ে থাকেন পরিচালক পাভেল। এই ক্রিসমাসেও বড়সড় চমক রাখলেন তিনি। পাভেল মানেই নতুন ভাবনার সম্ভার। ‘রসগোল্লা’-খ্যাত এই পরিচালককে এবার দেখা যাবে বিশেষ চরিত্রে অভিনয়ের দায়িত্ব সামলাতেও। হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন। পাভেলের আসন্ন দুটি ছবি ‘মন খারাপ’ এবং ‘কলকাতা চলন্তিকা’তে পরিচালনার পাশাপাশি অভিনয়ও করছেন তিনি।
পরিচালক থেকে অভিনেতা, নতুন জার্নির অভিজ্ঞতা কেমন? সেই সম্পর্কে বলতে গিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে পাভেল জানিয়েছেন, এই প্রথম নয়, এর আগেও স্ক্রিনে বিভিন্ন সময় দেখা মিলেছিল তাঁর। কিন্তু অনেকটা দর্শকদের অজান্তেই। ‘এর আগে ‘বাবার নাম গান্ধীজি’ সিনেমায় কেঁচো যখন রেললাইন পার করছিল, ওর যেন চোট না লাগে তাই পিছন ঘুরে আমি দাঁড়িয়েছিলাম। এই রকম অনেক জায়গায় পিছনে দেখা গিয়েছে। সামনে দীর্ঘ সময় ধরে এবারই প্রথম।’
_1640266637302.jpeg)
পরিচালনা নাকি অভিনয় কোনটা সহজ? তাঁর কথায়, ‘পরিচালনা আমার কাছে অনেকটাই সহজ এবং অনেক বেশি ভালোবাসার। তবে অভিনয় করে বেশ মজা পেয়েছি। তবে দুটোকে ম্যানেজ করার ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধেও থাকে, আবার সুবিধেও থাকে। অসুবিধে বলতে গেলে, মাথায় আরও অন্যান্য অনেকগুলো ক্ষেত্রের চিন্তা নিয়ে অভিনয়টা করা। আর সুবিধে বলতে গেলে, আগে থেকে অনেক কিছু জানা থাকে নিজের; কীভাবে এডিট হবে, শট নেওয়ার ক্ষেত্রেও। আমার কাছে দুটোই খুব মজার বিষয়।’
অভিনয়ের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বাড়তি জিনিসও মেনে চলতে হয়েছে পরিচালককে। কর্মসূত্রে রাত জেগে লেখার অভ্যেস তাঁর। পাভেল জানিয়েছেন, রাত জেগে লেখার ফলে বেশ ক্লান্ত দেখাতো শটে। তাই অনেকেই তাঁকে রাত জাগার অভ্যাস ত্যাগ করতে বলেছিলেন। ‘কলকাতা চলন্তিকা’র রোলটা আসলে পাকেচক্রে ঘটে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন। কিন্তু ‘মন খারাপ’-এর রোলটার জন্য প্রায় ২৭ কেজির মতো ওজন ঝরাতে হয়েছে পরিচালককে।
_1640266674553.jpeg)
ছবিতে নিজের চরিত্র সম্পর্কে বলতে গিয়ে পরিচালকের কথায়, ‘আমার ‘কলকাতা চলন্তিকার’ ক্যারেক্টারটা ‘মন খারাপ’-এর থেকে তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু চরিত্রটা আমার খুব প্রিয় এবং পছন্দের। তার অন্যতম কারণ চরিত্রটি একজন কবির। যেহেতু আমি ছোটবেলা থেকে লিটল ম্যাগাজিনের সঙ্গে যুক্ত এবং কবিতা লিখি, তাই আমি আমার সেই পুরনো বইমেলার দিনগুলোয় ফিরে যেতে পেরেছিলাম। তবে ‘মন খারাপ’-এর রোলটা একটু আলাদা। চরিত্রটা নিয়ে আপাতত বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়। তবে চরিত্র আর আমার মধ্যে একটাই মিল রয়েছে। আমরা দু'জনেই একটু রাগচটা।’
কী করে নিজের রাগ সামলান, সেই ব্যাখ্যা দিয়ে জানিয়েছেন, ‘আমার একটা যন্ত্র আছে। যেটা ঘোরালে সুন্দর আওয়াজ হয়। যখনই রাগ হয়, আমি মেশিনটা ঘোরাতে থাকি। সেটা দেখলে যাঁরা আমাকে চেনে, তারা আরও বেশি ভয় পেয়ে যায়।’ রাগ হলে বেশ কিছু ভয়ানক কাণ্ডও ঘটান তিনি। সেগুলো অবশ্য বলতে নারাজ পরিচালক।

নিজেকে সিনেমা পাগল বলেই জানিয়েছেন পাভেল। সিনেমায় বিশ্বাসী তিনি। স্ক্রিপ্ট লেখা, পরিচালনার বাইরে গিয়েও বিভিন্ন সময় সিনেমার বিভিন্ন পরিসরে নিজেকে মেলে ধরেছেন। জিতের 'বাচ্চা শ্বশুর' ছবিতে ‘সাইরা রে’ গানে মিউজিক করেছিলেন। ‘রসগোল্লা’ সিনেমার ‘ধীরে ধীরে’, ‘খোদার বান্দা’ গানের লিরিক্স তাঁর লেখা। সিনেমার যে কোনও কাজ করতে ভালোবাসেন।
ক্রিসমাস কিন্তু বরাবরই স্পেশাল পাভেলের কাছে। কারণ আজ থেকে তিন বছর আগে ২১ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছিল তাঁর পরিচালিত ছবি ‘রসগোল্লা'। সেই ছবির মিষ্টি জয়যাত্রা, ফেলেছে তাঁর জীবনে। এ বছরও দর্শকের নিজের পরিচালনার পাশাপাশি অভিনয়ের কথা ঘোষণা করে বড়সড় চমক দিলেন পরিচালক। পাভেল জানিয়েছেন, ‘এইট্টিথ্রি’, ‘টনিক’ থেকে ‘আতরঙ্গি রে’.. একগুচ্ছ সিনেমা দেখার প্ল্যানিং রয়েছে এই ক্রিসমাসে। ছেলে-বৌকে নিয়ে বেড়াতেও যাবেন। প্রথমবার ছেলেকে চার্চে ঘোরাতে নিয়ে যাবেন তিনি।
কিছুদিন আগেই ‘মন খারাপ’-এর শ্যুটিং শেষ হয়েছে। সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার ভিত্তিক এই ছবি। ছবিতে প্রিয়াঙ্কা ভট্টাচার্য, অঙ্কুশ ছাড়াও কৌশিক সেন, বিদীপ্তা চক্রবর্তী, অপরাজিতা আঢ্য, ঋদ্ধি সেনের মতো অভিনেতারা অভিনয় করছেন।
অন্যদিকে, পোস্তা ফ্লাইওভার ভেঙে পড়ার প্রেক্ষাপটে তৈরি হচ্ছে ‘কলকাতা চলন্তিকা’। ছবির চিত্রনাট্য এবং সংলাপ লেখা পাভেলের। গল্প লিখেছেন অধ্যাপিকা স্বাতী বিশ্বাস এবং পাভেল। ছবিতে অভিনয় করেছেন অপরাজিতা আঢ্য, শঙ্কর দেবনাথ, খরাজ মুখোপাধ্যায়, রজতাভ দত্ত, তোতোন, বিশ্বরূপ বিশ্বাস, অমলকান্তি দাস, অনির্বাণ চক্রবর্তী, কিরণ দত্ত, তাব্দী চক্রবর্তী, সৌরভ দাস, ঈশা সাহা, দিতিপ্রিয়া রায়। এছাড়াও, পাভেলের হাতে রয়েছে ‘ডাক্তার কাকু’র মতো প্রোজেক্ট। বোঝাই যাচ্ছে, বাংলা সিনেমাপ্রেমীরা নতুন বছরে ভালো ছবি উপহার পেতে চলেছেন।