অ্যান্ডারসন-তেন্ডুলকর ট্রফির সব ম্যাচ পঞ্চম দিন পর্যন্ত গড়িয়েছে। তিনটেয় ফয়সালা হয়েছে আর একটা ড্র। ওভালে সিরিজের পঞ্চম তথা শেষ টেস্ট চতুর্থ দিনেই শেষ হয়ে যাবে। তার আগে তৃতীয় দিনে ওভালে বাজিমাত করেছেন বাংলার আকাশ দীপ। ভারতের হয়ে টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে নাইট ওয়াচম্যান হিসেবে নামা বাংলার এই পেসার ব্যাট হাতেও যে চমক দিতে পারেন, সেটাই দেখিয়ে দিয়েছেন।
শনিবার টেস্ট কেরিয়ারে প্রথমবার হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন আকাশদীপ। আর ঠিক তখনই ড্রেসিংরুমের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানাতে উঠে দাঁড়ালেন শুভমান গিল, রবীন্দ্র জাদেজারা। শুধু তাই নয় ভারতের হেড কোচ গৌতম গম্ভীরের মুখেও ফুটে উঠল তৃপ্তির হাসি।
অ্যাটকিনসনের বলে বাউন্ডারি মেরে ৫০ রানের মাইলস্টোন স্পর্শ করেন আকাশ।যা ভারতের জন্য ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ওই মুহূর্তে জার্সির পেছনে লেখা ‘৩১৩’ নম্বরটি দেখিয়ে উদযাপন করেন তিনি। হেলমেট খোলার কথা জানাচ্ছিলেন দূর থেকে জাদেজা, কিন্তু আকাশদীপ তখন যেন অন্য জগতে। জীবনের কঠিন পথ পেরিয়ে যে এখানে পৌঁছেছেন তিনি। ১২টি চার মেরে ৯৪ বলে ৬৬ রান করে লাঞ্চের ঠিক আগে গাস অ্যাটকিনসনের বলে আউট হন তিনি। কঠিন পিচে বাংলার বোলারের এই ব্যাটিং পারফরম্যান্স সত্যিই কুর্নিশ যোগ্য।আকাশ দীপ ওপেনার যশস্বী জয়সওয়ালের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে ১০৭ রানের জুটি গড়েন, যা চলতি সিরিজের ১৮তম শতরান-জুটি। ২০০০ সালের পর এটিই কোন টেস্ট সিরিজে সর্বোচ্চ শতরান পার্টনারশিপের রেকর্ড। এই ব্যাটে-বলের যুগলবন্দীতে আকাশ দীপ প্রমাণ করেছেন, তিনিই ভারতের টেস্ট দলে লম্বা রেসের ঘোড়া।
বাংলার আকাশ দীপের ব্যাটিং দেখে মুগ্ধ হয়েছেন ক্রিকেটপ্রেমী থেকে শুরু করে প্রাক্তন তারকা সকলেই। শুধু তাই নয়, অনেকে এটাও মনে করছেন যে আগামী ম্যাচগুলিতে আকাশের ব্যাটিং ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারলে দলের পক্ষে ভালো হবে।
বিসিসিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শুভমান গিল বলেন, 'বহু দিন ধরেই বোলার আর ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একটা মশকরা হয়..' এরই সঙ্গে তিনি বলেন ‘অনেক দিন ধরেই আমাদের মধ্যে আলোচনা চলছে। সেখানে টেল এন্ডারদের বহুবার বলা হয়েছে, তোমরাও ব্যাটিংয়ে একটু অবদান রাখো বন্ধু। আর কী বলি! মনে হয়…’ এরপরই হিন্দিতে শুভমন বলেন,'ইস ম্যাচমে উনহোনে আগে পিছে কি পুরি কসর নিকালদি!(আকাশ এই ম্যাচে আগে পরের সবকিছু পুষিয়ে দিয়েছেন।) ' তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তাঁকে একটা কথাই বলেছিলাম, যে বলই তোমার নজরে থাকুক না কেন, রান করার চেষ্টা করো। এই ৬৬ রান সেঞ্চুরির চেয়ে কোনও অংশে কম নয়।’
অন্যদিকে সতীর্থ কে এল রাহুল বলেন, 'বেশিরভাগ কথাই সব সময় বোলারদের ব্যাট চুরি করার চেষ্টা নিয়ে হয়।' আজই, আমি তাঁকে বলেছিলাম নিজেকে ব্যাটারের মতো ভাবতে।ব্যাট হাতে আকাশের সাফল্যের পর টিম ইন্ডিয়ার ব্যাটিং কোচ সীতাংশু কোটাকও উচ্ছ্বসিত। তিনি বলেন, 'আকাশকে বলেছিলাম, যদি তুমি নাগালের মধ্যে বল পাও, তাহলে শুধু মারবে। জোর করে ডিফেন্স কোরো না। কারণ শেষ দু’টি ইনিংসে তুমি ডিফেন্স করতে করতে আউট হয়েছ।'এদিকে, এক ভিডিও বার্তায় আকাশ দীপ বলেন, গত রাতে যখন আমি ঘুমাতে গেলাম, তখন ভাবছিলাম আমি আউট হব না। আমার শরীরে আঘাত লাগুক বা অন্য কোথাও, আমি খেলব। আমার জন্য, পঞ্চাশের চেয়েও বিশেষ হল দলের জন্য দুই ঘন্টা খেলা।' আকাশ দীপ আসলে বিহারের, খেলেন বাংলার হয়ে। টেনিস বল দিয়ে হাতেখড়ি। তাঁর বাবা চাইতেন ছেলে যেন সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বসেন। ছ'মাসের মধ্যে বাবা-দাদাকে হারিয়ে সেই আকাশ দীপই বুঝে যান এই জীবন আসলে মেঘ ও রৌদ্রের খেলা। এই আলো তো এই অন্ধকার।