প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রুপান্তরিত হয়েছে ইয়াস।‘ল্যান্ডফল’ হতে আর মাত্র ২৪ ঘণ্টা বাকি। বুধবার দুপুরের মধ্যে শক্তি সঞ্চয় করে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে ইয়াসের। গতবছরই আম্ফান আছড়ে পড়েছিল এ রাজ্যে। আমফান তাণ্ডবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল জনজীবন। জেলায় জেলায় কাচা বাড়ি তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছিল। রাস্তায় উপড়ে পড়েছিল বিদ্যুতের খুঁটি-মোটা গাছপালা। তা সরাতেই সপ্তাহের পর সপ্তাহ কেটে গিয়েছিল বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীদের। ওদিকে, জায়গায় জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে যাওযায়, কয়েক সপ্তাহ ধরে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছিল গোটা রাজ্য। সেগুলিও সংস্কার করতে অনেক সময় লেগে গিয়েছিল। কোথাও কোথাও হাঁটু কিংবা কোমর পর্যন্ত জলও জমে গিয়েছিল। সেই স্মৃতি আবারও ফিরতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আগাম সতর্কতা নিয়ে রাখাই বাঞ্ছনীয়। যাতে বিপর্যয়ের আগে বা পরে প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নেওয়া যেতে পারে। সেকারণে ইয়াস আসার আগে জেনে নিন কী কী করণীয়, আর কী বা এড়িয়ে চলতে হবে।ইয়াস আসার আগে কী কী সাবধানতা অবলন্বন করবেনপ্রথমেই বলে রাখা ভাল কোনও রকমের গুজবে কান দেবেন না। ঝড়ের সমস্ত আপডেট পেতে বাড়িতে ব্যাটারি চালিত রেডিও থাকলে ভাল। ব্যবহার করুন আর তা না হলে, প্রচলিত সংবাদমাধ্যমগুলোর আপডেটের উপর নজর রাখুন। ঘরে ওষুধপত্র, জ্বর, পেটে ব্যাথার, কেটে ছড়ে গেলে ব্যান্ডেড, ডেটল, অ্যান্টাসিড, অ্যান্টিসেপ্টিক ওষুধ মজুত রাখা ভাল। এছাড়াও শুকনো খাবার যেমন চিড়ে, মুড়ি, বিস্কুট, চানাচুর, গুড়, চাল, ডাল, আলু, চিনি ইত্যাদি মজুত রাখুন।ঝড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে, সেক্ষেত্রে ঘরের সমস্ত বৈদ্যুতিন যন্ত্র যেমন পাওয়ার ব্যাঙ্ক, মোবাইল, এমারজেন্সি লাইট থাকলে তা সম্পূর্ণ চার্জ দিয়ে রাখুন। পাশাপাশি মোমবাতি, দেশলাই, টর্চ, কুপি বা হেরিকেন যা উপলব্ধ হয় সেগুলো তৈরি রাখুন।ঝড়ের সময় ঘরের সমস্ত বৈদ্যুতিন সংয়োগের তার খুলে দিন। তা ছাড়াও ঝড়ের পর বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটলে, বাড়িতে বাড়িতে জল তোলার সমস্যা দেখা দেয়, সেক্ষেত্রে আগেভাগে পানীয় জল সংগ্রহ করে সমস্ত পাত্রগুলোয় ভরতি করে রাখাই নিরাপদ। কাচা কিংবা বিপজ্জনক বাড়ি থাকলে, অবিলম্বে সেখান থেকে অন্যত্র স্থানান্তর হয়ে প্রতিবেশী কারোর পাকা বাড়ি কিংবা সাইক্লোন সেন্টারগুলোতে আশ্রয় নিতে হবে। এছাড়াও জরুরি নথিপত্র ও মূল্যবান সামগ্রী ঘরের কোনও সুরক্ষিত উঁচু জায়গায় গুছিয়ে রাখুন। কী কী এড়িয়ে চলবেনঃঅযথা আতঙ্কিত হয়ে পড়বেন না। প্রয়োজনে প্রশাসনের সাহায্য নিন। যত দ্রুত সম্ভব নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিন। ঝড়ের সময় ঘর ছেড়ে কোথাও বাইরে বেরোবেন না।কোনও গাছের তলায়, অস্থায়ী দোকানের সামনে কিম্বা বিদ্যুতের পোলের কাছে আশ্রয় নেওয়ার জন্য দাঁড়াবেন না। এমনকী, ঝড়ের সময় বাইক, সাইকেলে যাতাযাতও বিপজ্জনক হতে পারে, সেক্ষেত্রে তা এড়িয়ে চলুন। অস্থায়ী ছাউনি, হোর্ডিং, ব্যানার, টিনের চাল, পুরনো দেওয়াল, নড়বড়ে গাছ এই সবের থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকুন। আবহাওয়া দপ্তরের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মৎস্যজীবীরা সমুদ্রে যাবেন না। ঝড়ের সময় গৃহপালিত পশুকে বেঁধে রাখবেন না।উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় তৎপর হয়েছে রাজ্য সরকার। বিপর্যয় মোকাবিলায় কোমর বেঁধে নেমেছে প্রশাসন। লালবাজারের কমন সেন্টারে পুলিশ-সহ সমস্ত বিভাগের আধিকারিকরা ঝড়ের গতিবিধির উপর নজর রাখবেন। তাছাড়া কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে উপান্ন ও নবান্নে। নিজে ওই কন্ট্রোলরুমে উপস্থিত থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রয়োজনে রাজ্য সরকার ও বিদ্যুৎ দপ্তরের হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করতে পারবেন। ২৫ মে থেকে দু’টি হেল্পলাইন নম্বর চালু হবে। নম্বরগুলো হল, ৮৯০০৭৯৩৫০৩ ও ৮৯০০৭৯৩৫০৪।