এক ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় রহস্য ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে! ঘটনা ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে নদিয়ার চাকদা থানা এলাকায়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রয়াত ওই ব্যবসায়ীর নাম নাজির শেখ। ৪৫ বছরের নাজির চাকদারই বাসিন্দা ছিলেন। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, ১২ নম্বর জাতীয় সড়কে পথদুর্ঘটনায় প্রাণ গিয়েছে নাজিরের। অথচ, যেখান থেকে তাঁর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করা হয়, কিংবা তার আশপাশে কোথাও দুর্ঘটনার কোনও চিহ্নমাত্র পাওয়া যায়নি! পরিবারের দাবি, নাজির শেখকে খুন করা হয়েছে।
নাজিরের পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, আজ (বুধবার - ২১ মে, ২০২৫) সকালেই নিজের মুদিখানা দোকানের জন্য কিছু মালপত্র কিনতে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন আরও এক ব্যক্তি। তিনি একজন মোটরভ্য়ান চালক। তাঁর নিজের একটি মোটরভ্য়ানও রয়েছে।
পরিবারের দাবি, নাজির বাড়ি থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষণ পরই ওই মোটরভ্যান চালক ফোন করে জানান, তাঁর মোটরভ্য়ানের সঙ্গে একটি লরির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে জাতীয় সড়কে এবং তাতেই নাজিরের মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগ, নাজিরের মৃত্যুর খবর দেওয়ার পর থেকেই ওই ভ্যানচালক তাঁর ফোন বন্ধ করে দেন এবং বেপাত্তা হয়ে যান।
এদিকে, সকাল ৮টা নাগাদ জাতীয় সড়কে রক্তের দাগ দেখতে পান আশপাশের দোকানদাররা। তাঁরা পুলিশে খবর দেন। পরে জাতীয় সড়ক থেকেই নাজির শেখের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ দাবি করে, খুব সম্ভবত দুর্ঘটনার ফলেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। অথচ, কোথাও দুর্ঘটনার কোনও সূত্র বা প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
নাজিরের পরিবারের লোকেদের বক্তব্য, লরির সঙ্গে মুখোমুখি ধাক্কা লাগলে সেই মোটরভ্যানটিও অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হতো। কিন্তু, সেই ভ্যান কোথায়, কেউ জানে না! তাছাড়া, এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে মোটরভ্য়ান চালকেরও আহত হওয়ার কথা। কিন্তু, তিনিও যেন 'ভ্য়ানিশ' হয়ে গিয়েছেন! এটা কীভাবে সম্ভব?
আশপাশের দোকানদাররাও দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে কিছু বলতে পারেননি। এদিকে, নাজিরের স্ত্রী জানিয়েছেন, তাঁর স্বামীর গলায় আঁচড়ের স্পষ্ট দাগ ছিল। দুর্ঘটনায় এমনটা কীভাবে ঘটতে পারে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন ওই মহিলা।
আর পুলিশের বক্তব্য হল - শিমুরালি এলাকায় জাতীয় সড়ক থেকে নাজিরকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। সেখান থেকে তাঁকে চাকদা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপর, ময়নাতদন্তের জন্য তাঁর দেহ পাঠানো হয় কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালের মর্গে।
নাজিরের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে একটি খুনের মামলা রুজু করেছে চাকদা থানার পুলিশ। আপাতত ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছে তারা। পুলিশও মানছে যে দুর্ঘটনার চিহ্ন না পাওয়া, মোটরভ্য়ান ও তার চালকের 'গায়েব' হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাগুলি নিঃসন্দেহে রহস্যজনক।