সাধুবেশে বাড়ির মহিলাদের বোকা বানিয়ে তাঁদের গায়ে থাকা সোনার গয়না নিয়ে চম্পট দিয়েছিল চার চোর। অভিযোগ দায়ের হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাদের পাকড়াও করল হাওড়া সিটি পুলিশ। উদ্ধার করা হল খোয়া যাওয়া গয়নাও।
ধৃত চার 'কীর্তিমান' হল - হাদিস লাঠোর, মনোজ লাঠোর, ছোটু লাঠোর এবং নেতা লাঠোর। এরা সকলেই বিহারের গয়ার বাসিন্দা বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।
ঘটনা প্রসঙ্গে জানা গিয়েছে, গতকাল (মঙ্গলবার - ২০ মে, ২০২৫) সকাল ১০টা ৩০ মিনিট নাগাদ হাওড়া ময়দান এলাকার রামেশ্বর মালিয়া ফাস্ট বাই লেনের বাসিন্দা পিন্টু শর্মার বাড়িতে হঠাৎই হজির হয় চার 'সাধু'। তাদের মাথায় ছিল পাগড়ি, গলায় রুদ্রাক্ষের মালা, কপালে তিলক আর কাঁধে ঝোলা। হাতে ধরা ছিল হনুমান ও শিবের ছবি!
তাদের এহেন রূপ দেখেই ভক্তিতে গদগদ হয়ে যান শর্মা বাড়ির মহিলারা। চার 'সাধু' প্রথমেই বাড়ির মহিলাদের নানা ধরনের 'ধর্মকথা' শোনায়, বাড়ির সদস্যদের ভবিষ্যৎ বাতলে দেয়। তারপর শর্মা বাড়ির মহিলাদের তারা বোঝায়, তাঁরা যদি নিজেদের গায়ের গয়না খুলে কাপড়ে মুড়ে বাড়ির পূর্ব কোণে রেখে দেন, তাহলে বিকেলের মধ্য়েই সেই সোনার গয়না দ্বিগুণ হয়ে যাবে!
লোভের ফাঁদে পা দিয়ে বাড়ির এক মহিলা নিজের গলা থেকে সোনার হার ও সোনার মঙ্গলসূত্র খুলে 'সাধু'দের দেন। এরপর সেই গয়না কাপড়ে মুড়ে বাড়ির পূর্ব কোণে রাখা হয়। কিন্তু, বিকেলে সেই কাপড় খোলা হলে দেখা যায়, তাতে কোনও গয়না নেই। বাড়ির সদস্যরা বুঝতে পারেন, সাধুবেশে যারা এসেছিল, তারা আসলে ঠগ, জোচ্চোর। সোনার গয়না কাপড়ে মোড়ার অছিলায়, সেই গয়না তারা নিজেরাই হাতসাফাই করে নিয়েছে!
এরপরই হাওড়া সিটি থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয় পরিবারের তরফে। তদন্তের শুরুতেই সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হয় এবং অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা হয়। জানা যায়, হাওড়া ময়দানের বঙ্গবাসী মোড় থেকে চার অভিযুক্তকেই একটি বাসে উঠতে দেখা গিয়েছে। এই সূত্র ধরে অভিযুক্তদের সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায় পুলিশ।
জানা যায়, ওই দলটি সম্প্রতি দক্ষিণেশ্বরে এসে থাকতে শুরু করেছে। তারা সাধু সেজে নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ায় বলেও জানতে পারে পুলিশ। এরপর মঙ্গলবার রাতেই দক্ষিণেশ্বর থানার আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালায় হাওড়া সিটি থানার পুলিশ। বমাল পাকড়াও করা হয় অভিযুক্তদের। সকলকেই গ্রেফতার করা হয় এবং ধৃতদের কাছ থেকে চুরির মালও উদ্ধার করা হয়।
হাওড়া সিটি পুলিশের এক আধিকারিক এই প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, 'এদের সকলের বাড়ি বিহারের গয়ায়। একাধিক জায়গায় এরা সাধু সেজে চুরি করেছে। মানুষকে ধর্মের কথা শুনিয়ে সম্মোহিত করে গয়নাগাটি নিয়ে পালাত। এই চক্রের সঙ্গে আর কে বা কারা জড়িত আছে, জানার চেষ্টা চলছে।'