নিজের ঘোষণা মতোই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে মানহানির মামলা দায়ের করেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। আজ, বুধবার ওই মামলা কলকাতা হাইকোর্টে উঠলে পদ্ধতিগত ত্রুটির জেরে আবেদন প্রত্যাহার করে পুনরায় ফাইল করতে নির্দেশ দেন বিচারপতি কৃষ্ণা রাও। মুখ্যমন্ত্রীর আইনজীবী সঞ্জয় বসু আজ বলেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী যখন নিজেই একজন মহিলা, তখন তিনি আরও ভাল করে মহিলাদের যন্ত্রণা বুঝবেন।’ সম্প্রতি রাজভবনের এক অস্থায়ী মহিলা কর্মী হেয়ার স্ট্রিট থানায় রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। সেই বিষয়ও উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রীর আইনজীবী।
এদিকে নয়াদিল্লিতে পাঁচতারা হোটেলে বাংলার এক নৃত্যশিল্পীকে ধর্ষণ করেছেন আনন্দ বোস বলেও থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়। তাই রাজভবন যে মহিলাদের পক্ষে নিরাপদ নয় এবং সেখানে যেতে মেয়েরা ভয় পাচ্ছে এমন কথাই বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে রাজ্যপালের মানহানি হয়েছে বলে তাঁর দাবি। তাই এই মামলা দায়ের করা হয়। রাজ্যপালের আইনজীবী ধীরজ ত্রিবেদী আজ আদালতে বলেন, ‘রাজ্যপালকে জড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের করা একাধিক মন্তব্যে তাঁর মানহানি হয়েছে। প্রমাণ হিসেবে একাধিক সংবাদপত্রের প্রতিবেদন এবং ভিডিয়ো ফুটেজ আদালতে হাজির করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: ‘কেউ ভাঙড় কেড়ে নিতে পারে না’, জেল থেকে ছাড়া পেয়ে হুঙ্কার তাজা নেতা আরাবুলের
অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী এই মামলায় প্রাক্তন দুই এজিকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। তার সঙ্গে আছে এখনকার এজি। আবার আইনজীবী সঞ্জয় বসু। সুতরাং এই মামলার সওয়াল জবাব পর্ব হবে জোরদার। সঞ্জয় তাঁর বিবৃতিতে জানান, আজ দুপুর পর্যন্ত মামলা সংক্রান্ত কোনও কাগজ হাতে পাননি। মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ খণ্ডন করতে যে যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে। এই মামলা আসলে রাজ্যপালের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করা এবং বিধানসভা উপনির্বাচনে জয়ী দু’জনের শপথগ্রহণ বিলম্বিত করার প্রয়াস। বিচারপতি জানতে চান, যেসব সংবাদমাধ্যমের থেকে আবেদনকারী এই খবর পেয়েছেন মামলায় সেই সব সংবাদমাধ্যমকে পার্টি করা হয়েছে। জবাবে রাজ্যপালের আইনজীবী বলেন, ‘রাজ্যপালের বিরুদ্ধে যা বলা হচ্ছে তা ইউটিউবে রয়েছে। যে কেউ সেটা দেখতে ও শুনতে পারেন।’
তখন বিচারপতি কৃষ্ণা রাও নির্দেশ দেন, ‘মামলা প্রত্যাহার করে পুনরায় ফাইল করুন। না হলে পদ্ধতিগত ত্রুটি থেকে যাচ্ছে।’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী সঞ্জয় বসু সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করেছেন বলে নানা সূত্রে জানতে পারছি। তবে এখনও এই বিষয়ে আইনি কোনও চিঠি পাইনি। চিঠি এলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। রাজভবনে ঘটা ঘটনাগুলির প্রেক্ষিতেই মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য করেছিলেন। তাছাড়া উনি নিজেও একজন মহিলা।’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘জেতার পরও একমাস ধরে আমার বিধায়করা বসে আছে। রাজ্যপাল শপথ নিতে দিচ্ছেন না। মানুষ ওঁদের নির্বাচিত করেছে। ওঁর কী অধিকার তাঁদের শপথ নিতে না দেওয়ার? উনি হয় স্পিকারকে এই অধিকার দিন, নয়তো ডেপুটি স্পিকারকে দিন। না হলে নিজে বিধানসভায় যান। ওঁর রাজভবনে কেন সকলে যাবে? রাজভবনে যা কীর্তি–কেলেঙ্কারি চলছে, তাতে মেয়েরা যেতে ভয় পাচ্ছে বলে আমার কাছে অভিযোগ করেছে।’