মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারির পরই শহরজুড়ে চলল বুলডোজার। উত্তর থেকে দক্ষিণ সর্বত্রই গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় দখলদার। ট্রায়াঙ্গুলার পার্ক, যদুবাবুর বাজার থেকে সল্টলেক–রাজারহাট সর্বত্র বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় ঝুপড়ি দোকান। কান্নায় ভেঙে পড়েন হকাররা। এবার আবার হকার উচ্ছেদ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সব জেলার জেলাশাসক, পৌরসভা, সচিব এবং পুলিশ সুপারদের নিয়ে বৈঠক ডাকলেন। এই বিষয়টি নবান্নের পক্ষ থেকে জেলাশাসকদের জানানো হয়েছে। আবার নতুন করে বৈঠক ডাকলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নবান্ন সভাঘরের ওই বৈঠকে কী হয় তা নিয়ে আতঙ্কে সকলেই।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, হকার উচ্ছেদ অভিযান কেমন করে চলছে, সেখানে কোনও বদল ঘটাতে হবে কি না, সবটা নিয়ে পর্যালোচনা হতে পারে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে। আলোচনা হতে পারে উচ্ছেদ অভিযানের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়েও। আগের বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘আমার কথা তিক্ত লাগবে। কিন্তু আমি বেশ কিছুদিন ধরেই দেখছি গোটা বিষয়টা। কোথাও কোন দখলদার হলে, সঙ্গে সঙ্গে কেন অ্যাকশন নেওয়া হচ্ছে না? কেউ কেউ টাকা খেয়ে কাজ করছে।’ ওই বৈঠকে রাজ্যের পুরসভার পরিষেবা নিয়ে রণংদেহী মেজাজ দেখান তিনি। রাজ্যের নানা পুরসভা এলাকায় পানীয় জল, আবাসন, পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে জবরদখল করে অস্থায়ী দোকান খোলা নিয়ে সরব হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: বাড়ল না কেন্দ্রীয় বাহিনীর মেয়াদ, কলকাতা হাইকোর্ট শান্তিরক্ষার দায়িত্ব দিল রাজ্যকেই
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারির পরই দেখা যায় ‘অ্যাকশনে’ নেমে পড়েছে পুলিশ এবং পুরসভা। প্রথমে এলাকায় ঘুরে পুলিশ কর্তারা দোকান সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন। সল্টলেক, রাজারহাট, নিউটাউন, হাতিবাগান, গড়িয়াহাট, আলিপুর—সর্বত্র চষে বেড়ান পুলিশ কর্তারা। দোকানদারকে সতর্ক করা হয়। দোকান সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়ার পর একদিনের মধ্যেই বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়। এই বিষয় নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় মন্ত্রী–বিধায়কদেরও। সরাসরি কয়েকজনের নাম নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
এই আবহে হকারদেরই বক্তব্য, বহুদিন ধরে তাঁরা এখানে ব্যবসা করছেন। সল্টলেকের খাবারের দোকানে রোজ প্রচুর মানুষ খাবার খান, গড়িয়াহাটেও সেটা দেখা যায়। এক নিমেষে তাঁদের রুজি–রুটি বন্ধ হয়ে গেল। পরিবার নিয়ে এখন পথে বসতে হবে তাঁদের। শহরের বুকে এত হকার যাবে কোথায়? প্রশ্ন উঠছে। সরকারি জমিতে অবৈধ নির্মাণও ভেঙে ফেলা হয়েছে নানা জায়গায়। এই আবহে আবার বৈঠক আতঙ্ক তৈরি করেছে। মুখ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার পুলিশকর্তা এবং রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ অফিসারদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন।