কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলল কলকাতা পুলিশ। প্রতারককে ধরতে আর ভিন রাজ্যে যেতে হয়নি তদন্তকারী আধিকারিকদের। কলকাতায় বসেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাঁদ পেতে পলাতক প্রতারককেই শহরে ডেকে এনে গ্রেফতার করল পুলিশ। এই কামাল করে দেখিয়েছে গড়িয়াহাট থানার পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত হয় অগস্টে। এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী গড়িয়াহাট থানায় এফআইআর দায়ের করেন যে, অঙ্গদ মেহতা নামের এক ক্রেতা তাঁর কাছ থেকে প্রায় ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকার গয়না অর্ডার করেছিলেন। শর্ত ছিল, হিন্দুস্তান পার্কের এক গেস্ট হাউজে ওই সোনার গয়না ক্যাশ অন ডেলিভারি দিতে হবে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে। সেইমতো স্বর্ণ ব্যবসায়ীর দোকানের দুই কর্মচারী গয়না নিয়ে ওই গেস্ট হাউজে পৌঁছন। অভিযোগ, কর্মীদের কাছ থেকে গয়নার ডেলিভারি নেয় অঙ্গদ। তবে স্ত্রী'কে ওই গয়না দেখিয়ে আনার আছিলায় গেস্ট হাউজ থেকে উধাও হয়ে যায় ওই ব্যক্তি। এরপর অভিযুক্তের ফোনও বন্ধ হয়ে যায়। গেস্ট হাউজের কাছে অভিযুক্তের একটি ছবি ছাড়া আর কোনও সূত্র ছিল না। অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে গড়িয়াহাট থানার পুলিশ। পুলিশ জানতে পারে, অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি অন্ধ্রপ্রদেশে পালিয়ে গিয়েছে। এরপর ওই অভিযুক্তকে ধরতে ফাঁদ পাতে পুলিশ। ফেসবুকে পায়েল শর্মা নামে একটি ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। থানার সাব-ইনস্পেক্টর দিশা মুখোপাধ্যায় পায়েল সেজে ওই অভিযুক্তের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন। বন্ধুত্ব গাঢ় হতেই অভিযুক্তকে দেখা করার জন্য কলকাতায় আসতে বলেন পায়েলের ছদ্মবেশে থাকা ওই মহিলা পুলিশ অফিসার। বন্ধুর এই আবদার ফেলতে পারেনি ওই প্রতারক। অবশেষে কলকাতায় আসতে রাজি হয়ে যায় সে। সাক্ষাৎ করার জায়গা স্থির হয় মিলেনিয়াম পার্ক। গত ৮ সেপ্টেম্বর মিলেনিয়াম পার্কে মহিলা পুলিশ অফিসার-সহ অভিযুক্তের জন্য ওত পেতে বসে থাকে পুলিশ। 'বান্ধবীর' সঙ্গে দেখা করতে এসে ধরা পড়ে যায়। পুলিশি জেরায় অভিযুক্ত জানায়, ২০১৮ হায়দরাবাদের চঞ্চলগুড়া সংশোধনাগারে তিন বছর বন্দি ছিল অভিযুক্ত। এমনকী, পোর্ট ব্লেয়ারেও কারাবাসের সাজা কাটিয়েছে এই অভিযুক্ত। তদন্ত চলাকালীন বিধাননগর ইস্ট থানার সাহায্যে সল্টলেকের একটি গেস্ট হাউজে হানা দেয় গড়িয়াহাট থানার পুলিশ। সেখান থেকে অভিযুক্তের ছবি সাঁটানো তিনটি পৃথক নামে ভোটার কার্ড, আধার কার্ড ও সার্থক রাও বারবস নামের পোর্ট ব্লেয়ার সংশোধনাগারের ডেপুটি জেলারের জারি করা একটি 'প্রিজনার অ্যাডমিশন কার্ড' বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। তখনই পুলিশের সন্দেহ হয় অভিযুক্তের আসল নাম অঙ্গদ মেহতা নয়। পুলিশ জানতে পারে, ভুয়ো পরিচয়পত্র দেখিয়েই কলকাতায় অনলাইনে গয়না অর্ডার করত বাবরস। এছাড়াও দিল্লি, আমদাবাদ, লখনউয়ের মতো শহরেও তার নামে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, দেশের বিভিন্ন পাঁচতারা হোটেলে থেকে বিল না মিটিয়ে চুপিসারে পালিয়ে যেত অভিযুক্ত বলে অভিযোগ। অবশেষে বন্ধুত্বের হাতছানিতে সাড়া দিয়ে শ্রীঘরে ঠাঁই হয়েছে অভিযুক্তের।