খেলার ছলে বইয়ের আলমারিতে চড়তে গিয়েছিল সাত বছরের দীপ অধিকারী (নাম পরিবর্তিত)। কিন্তু বইয়ের আলমারি সেই ভার সহ্য করবে কেন, ব্যালেন্স হারিয়ে আলমারিটি উল্টে পড়ে একরত্তির গায়ের উপর। লোহার আলমারির চাপে বুকে ও পেটে গুরুতর আঘাত লাগে। পরে দেখা যায়, লিভারসহ অগ্ন্যাশয়ের গুরুতর ক্ষতি হয়েছে। রীতিমতো প্রাণসংশয় হয়েছিল। তবে কলকাতার মণিপাল হাসপাতালের (ইএম বাইপাস ও মুকুন্দপুর) চিকিৎসকদের একান্ত চেষ্টায় শেষমেশ সুস্থ জীবন ফিরে পেল দীপ।
ক্ষতি হয় একাধিক অঙ্গের
বাড়িতে খেলতে খেলতে এমন দুর্ঘটনা ঘটানোর পর তাঁকে দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কোলাঘাটের দীপকে প্রাথমিক কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখার পর চিকিৎসক জানান, লিভারে গুরুতর আঘাত লেগেছে। এর পর তাঁকে মণিপাল হাসপাতালে (মুকুন্দপুর) নিয়ে আসা হয়। সেখানে সিটি স্ক্যান ও এমআরসিপি করা হয়। অগ্ন্যাশয়ে গুরুতর আঘাত ধরা পড়ে এবং দেখা যায়, অগ্ন্যাশয়ের নালী সম্পূর্ণ ছিঁড়ে গিয়েছে। এর ফলে অগ্ন্যাশয়ের রস অন্ত্রে না গিয়ে পেটে জমছে। যা প্রাণঘাতী সংক্রমণ তৈরি করতে পারে। ক্ষতি হতে পারে ভিতরকার অঙ্গগুলির।
আরও পড়ুন - Kalyani University: বুধে PG-তে আবেদনের শেষ তারিখ, সোমবার বেরোল কল্যাণীর UG-র ফল, দিশেহারা পড়ুয়ারা
‘শিশুদের অগ্ন্যাশয়ের নালি ছিঁড়ে যাওয়া বিরল’
পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে চিকিৎসক প্রদীপ্ত কুমার শেট্টি ইআরসিপি (এন্ডোস্কোপিক রেট্রোগ্রেড কোলাঞ্জিওপ্যানক্রিয়াটোগ্রাফি) করে নালীতে স্টেন্ট বসানোর সিদ্ধান্ত নেন। অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া হলেও তুলনামূলক কম কাটা-ছেঁড়া করতে হয় এতে। আইসিইউতে সফলভাবে সম্পন্ন হয় অস্ত্রোপচার। চিকিৎসক প্রদীপ্ত কুমার শেট্টি জানান, ‘শিশুদের অগ্ন্যাশয়ের নালি ছিঁড়ে যাওয়ার মতো ঘটনা অত্যন্ত বিরল। এক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার করলে অবস্থা খারাপ হতে পারে। আবার শুধু ওষুধ দিলে প্রাণঘাতী জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই ইআরসিপি করে স্টেন্ট বসানোই একমাত্র উপায়। প্রক্রিয়াটি কঠিন হলেও এটাই শিশুটিকে বাঁচানোর সর্বশ্রেষ্ঠ উপায় ছিল। স্টেন্ট বসানোর পর অগ্ন্যাশয়ের রস আবার অন্ত্রে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে অগ্ন্যাশয়।’
দীপের বাবার কথায়…
যদিও এর পর সুস্থ হয়ে উঠতে বেশ সময় লেগেছে দীপের। প্রথমদিকে মুখ দিয়ে খাবার খাওয়া একেবারেই অসম্ভব ছিল তাঁর পক্ষে। স্যালাইনের মাধ্যমে খাবার খাওয়ানো হয় তাঁকে। একমাস পর খাবার খাওয়া স্বাভাবিক হয়। দীপের বাবা রাজেশ অধিকারীর কথায়, ‘১লা মে এই দুর্ঘটনা ঘটেছিল। রীতিমতো জীবন থমকে গিয়েছিল। শেষমেশ চিকিৎসকদের চেষ্টায় সুস্থ হল দীপ।’