উচ্চশিক্ষায় সাধারণ বিষয়ে পড়ুয়াদের আগ্রহ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। এই বাস্তবতা মেনে নিয়ে এবার বড়সড় রদবদলের পথে হাঁটছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। দীর্ঘদিন ধরেই পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম জেলার অধীনে থাকা ৫৬টি কলেজে ভর্তির হার উদ্বেগজনকভাবে কমছে। এই সঙ্কট থেকে মুক্তি পেতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সাধারণ স্নাতক কোর্সের অপ্রয়োজনীয় আসন ছাঁটাই করে তার জায়গায় চালু করা হবে কর্মমুখী ও বাস্তবমুখী নতুন কোর্স।
আরও পড়ুন: বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নে ‘সন্ত্রাসবাদী’ বিতর্ক, ইসি বৈঠকে কড়া বার্তা
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, স্নাতক স্তরে ৭৪ হাজারেরও বেশি আসন থাকা সত্ত্বেও এবছর আবেদন করেছে মাত্র ২৬ হাজার ছাত্রছাত্রী। বাকি প্রায় ৪৮ হাজার আসন ফাঁকা পড়ে থাকার আশঙ্কায় নড়েচড়ে বসেছে কর্তৃপক্ষ। উপাচার্য দীপক কর এই পরিস্থিতিকে গভীর সংকট হিসেবে চিহ্নিত করে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। সেখানেই নেওয়া হয়েছে সিদ্ধান্ত। আধুনিক সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কলেজে চালু হবে এমন কিছু কোর্স, যা সরাসরি কর্মসংস্থানের সঙ্গে যুক্ত। সূত্রের খবর, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা কলেজগুলিকে বলা হয়েছে ২০২৩ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত প্রতিটি বিষয়ের ভর্তি সংক্রান্ত গড় তথ্য পাঠাতে। যে বিষয়গুলিতে বিগত তিন বছরে ছাত্রভর্তি শোচনীয়, সেই অনার্স কোর্স বন্ধ বা আসন কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হবে। সেই ফাঁকা জায়গাগুলিতে আনা হবে ‘জব ওরিয়েন্টেড’ নতুন বিষয় যেমন আর্ট অব অ্যারোমাথেরাপি, ফিশারি সায়েন্স, মোবাইল রিপেয়ারিং ইত্যাদি।
এই ধরণের কর্মভিত্তিক কোর্স কিছু কলেজে ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় হয়েছে। যেমন ডেবরা কলেজ বা মুগবেড়িয়া গঙ্গাধর কলেজে ।সভায় উপস্থিত ওইসব কলেজের অধ্যক্ষরা জানিয়েছেন, পড়ুয়ারা এখন স্থায়ী চাকরি নয়, তাড়াতাড়ি উপার্জনের পথ খুঁজছেন। তাই সৌন্দর্যচর্চা, মেরামতি কিংবা মাছচাষের মতো প্রশিক্ষণমূলক শিক্ষার চাহিদা বেড়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছে, ফিশারি সায়েন্সের মতো বিষয় পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষকের অভাব থাকলেও বোটানি ও জুলজি বিভাগের বিদ্যমান অধ্যাপকেরাই প্রাথমিক পর্যায়ে এই কোর্স করাবেন। ভবিষ্যতে প্রশিক্ষিত বিশেষজ্ঞ নিয়োগের কথাও ভাবা হচ্ছে।।বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন যোগদা সৎসঙ্গ পালপাড়া মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুমন মণ্ডল। তিনি বিউটিশিয়ান প্রশিক্ষণ চালুর প্রস্তাব দেন। সেই সুপারিশের ভিত্তিতেই উপাচার্য অ্যারোমাথেরাপি কোর্সে গুরুত্ব দিতে বলেন।
বিশ্লেষকদের মতে, রাজ্যে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকার ফলে, সাধারণ অনার্স বা বিএড ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাহত। ফলস্বরূপ উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর অনেকেই কলেজে ভর্তি হতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এই প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে। তারা দক্ষতা ভিত্তিক, হাতে-কলমে কাজ শেখা শিক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। সেই বাস্তবতাকেই গুরুত্ব দিয়ে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে যুগোপযোগী বলে মনে করছে শিক্ষামহল। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে আরও জানানো হয়েছে, প্রতিটি কলেজকে একটি নির্দেশিকা পাঠানো হবে, যেখানে কর্মমুখী কোর্স চালুর প্রক্রিয়া, সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ ও তার সমাধান নিয়ে বিস্তারিত গাইডলাইন থাকবে।