তিনি চিকিৎসক। অথচ তাঁর গাড়ির ধাক্কাতেই মৃত্যু হয়েছিল এক ভ্যান চালকের। আর তিনি নিজে এই কাজ করার পরও আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন জামিনের জন্য। শুধু তাই নয়, তিনি আরজি কর হাসপাতালের চিকিৎসক। বিটি রোডের উপর ‘হিট অ্যান্ড রান’ ঘটিয়েছিলেন। তবে এবার সেই মামলায় জামিন পেলেন আরজি কর হাসপাতালের চিকিৎসক দেবজিৎ বিশ্বাস। শনিবার দিন বিটি রোডে তাঁর গাড়ি ধাক্কা মারে এক ভ্যান চালককে। আর তাতেই মারা যান জগদীশ নামে ওই ভ্যান চালক। এই ঘটনায় পুলিশ অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করে। সেই মামলায় শিয়ালদা কোর্টে জামিন পেলেন সরকারি হাসপাতালের ওই চিকিৎসক।
কিন্তু এই মৃত্যুকে অনেকে খুন হিসাবেই দেখাতে চেয়েছেন। কারণ তাঁর গাড়ির ধাক্কাতে একজন গরিব ভ্যান চালক মারা গেলেন। এটা কেমন করে অনিচ্ছাকৃত দুর্ঘটনা বা খুন হল? প্রশ্ন অনেকেরই। যদিও চিকিৎসকের আইনজীবী আদালতে সওয়াল করেন, ৪৮ ঘণ্টা ১৪ মিনিট টানা ডিউটি করেছিলেন ওই চিকিৎসক। তাই শনিবার গাড়ি চালিয়ে ক্লান্ত শরীরে ফিরছিলেন ওই চিকিৎসক। তাই গাড়ি চালানোর সময় চিকিৎসক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার জেরেই ওই পথ দুর্ঘটনা ঘটে। ওই চিকিৎসক পুলিশের জেরায় বলেন, ‘আমি ইচ্ছে করে করিনি। ভুল করে পথ দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে।’ আদালত দুই পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য শুনে ওই চিকিৎসককে জামিন দেন।
আরও পড়ুন: ছাত্রীকে টেনে হিঁচড়ে জঙ্গলে নিয়ে গেল তিন দুষ্কৃতী, আরামবাগে ঘটল তুলকালাম কাণ্ড
এই আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় জুনিয়র ডাক্তাররা ব্যাপক আন্দোলন শুরু করেছিলেন। রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলিতে অচলাবস্থা তৈরি করেন। আবার ওই হাসপাতালের চিকিৎসকের গাড়িতে একজন প্রাণ হারালেন। আর দাবি করা হল, অনিচ্ছাকৃত দুর্ঘটনা বা খুন। যার জেরে জামিন পেয়ে গেলেন। শনিবার বিকেলে বিটি রোডে শ্যামবাজার থেকে সিঁথি মোড়ে যাওয়ার সময় পথ দুর্ঘটনা ঘটে। ভ্যান চালককে পিষে দেয় চিকিৎসকের গাড়ি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জনরোষ তৈরি হয়। এমনকী পথ দুর্ঘটনার পর গাড়ি নিয়ে পালানোর চেষ্টা পর্যন্ত করেন ওই চিকিৎসক বলে অভিযোগ। আর পালাতে গিয়ে আর একটি গাড়িতে ধাক্কা মারেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে গাড়ি ফেলে রেখে দৌড়ে পালিয়ে যান বলে অভিযোগ। সেটা কেমন করে অনিচ্ছাকৃত দুর্ঘটনা? উঠছে প্রশ্ন।
সেখানে আজ সোমবার জামিন পেয়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ ওই এলাকার বাসিন্দারা। তবে জামিন পাওয়া মানেই যে বেকসুর খালাস সেটা বলা যায় না। এই মামলা এখন চলবে। স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন এই ঘটনার জেরে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ওই চিকিৎসক চালকের কড়া শাস্তির দাবি করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। রাত ৯টা নাগাদ গাড়ি ওই চিকিৎসক দেবজিৎ বিশ্বাসকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ধৃত চিকিৎসক জানান, গাড়ি চালানোর সময় ক্লান্তির জেরে তাঁর চোখ লেগে যাওয়ার জেরেই এই পথ দুর্ঘটনা ঘটেছে।