জেলে থাকার সময়ও তাঁকে জেলা সভাপতির পদ থেকে সরাননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের সাম্প্রতিক রদবদলে সেই পদ থেকে অনুব্রত মণ্ডলকে সরিয়ে জেলা সভাপতি পদটিই তুলে দিয়েছেন তিনি। তার বদলে গঠন করা হয়েছে জেলা কোর কমিটি। যার ৯ সদস্যের মধ্যে ১ জন হলেন অনুব্রত। শুক্রবার সন্ধ্যায় তৃণমূলের সাংগঠনিক রদবদলের সেই নথি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই শুরু হয়েছে নানা জল্পনা। তাহলে এবার অনুব্রত মণ্ডলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী, উঠতে শুরু করেছে সেই প্রশ্নও। আর অনুব্রতর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের খবর, এবার রাজনীতি থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে চান তিনি। সম্ভবত আগামী বিধানসভা নির্বাচনের পর রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়তে পারেন তিনি।কয়লা ও গরুপাচারকাণ্ডে ইডি - সিবিআই যখন অনুব্রতকে নিয়ে টানাটানি করছে তখন তাঁর জেলযাত্রা রুখতে চেষ্টার কসুর করেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সফল হননি তিনি। শুধু অনুব্রত নন, তিহাড়ে যেতে হয়েছে তাঁর মেয়ে সুকন্যাকেও। তবে তিহাড়ে বন্দি অনুব্রতকে মুক্ত করতে তেমন তৎপরতা দেখায়নি তৃণমূল। প্রায় ২৫ মাস কারাবন্দি থাকাকালীন শরীর ভেঙেছে তাঁর। একে একে তাঁর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে কোটি কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোজিট। গত সেপ্টেম্বরে জেল থেকে বেরিয়ে অনুব্রত গ্রামের বাড়ি গিয়ে ঘনিষ্ঠদের বলেছিলেন, পয়সা নেই, এবার পুজোয় আর ভোজ খাওয়াতে পারবেন না। দলনেত্রীও বুঝেছেন জেলফেরত কেষ্টর কোমরে আর সেই জোর নেই।জেলমুক্তির পর অনুব্রত পুরনো ফর্মে ফিরবেন বলে আশা করেছিলেন তাঁর অনুগামীরা। কিন্তু কারাবাসের ধকল ও বয়সের কারণে সেই তৎপরতা আর দেখা যায়নি অনুব্রতর মধ্যে। বরং এই সময় যথেষ্ট সাবধানী ছিলেন তিনি। বিরোধীদের হুমকি দেওয়ার জন্য যিনি শিরোনামে থাকতেন তাঁর মুখে শোনা গিয়েছে একসাথে চলার ডাক।অনুব্রতর ঘনিষ্ঠ মহলের মতে, তাঁর কৃতকর্মের জন্য মেয়েকে জেল বন্দি হতে হওয়ায় ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়ে যাওয়ায় মন ভেঙে গিয়েছে অনুব্রতর। জেলমুক্তির পর সক্রিয় রাজনীতিতে থাকতে আর ইচ্ছুক নন তিনি। অবু সমর্থক ও অনুগামীদের মুখের দিকে চেয়ে রাজনীতিটা করতে হচ্ছে তাঁকে। তাছাড়া তৃণমূলে থাকা ছাড়া গতিও নেই তাঁর।রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, অনুব্রত মণ্ডলের পক্ষে অন্য কোনও দলে যোগদান সম্ভব নয়। কারণ, তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি ও কংগ্রেস ছাড়া আর কোনও দলে যাওয়ার সুযোগ নেই এরাজ্যে। এর মধ্যে কংগ্রেসে যোগদান আর রাজনীতি থেকে অবসর প্রায় সমার্থক। আর দুর্নীতির অভিযোগে জেলবন্দি ছিলেন এমন কাউকে বিজেপি নীতিগতভাবে দলে নেয় না। যে কারণে সারদাসহ অন্যান্য চিটফান্ডে মমতা সরকারের হাতে জেলবন্দিদেরও সেই তৃণমূলেই ফিরতে হয়েছে।ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, রাজনীতি করার ইচ্ছা আর নেই অনুব্রতর। ৬৫ বছর বয়সী অনুব্রত এখন নিজের শরীর ও মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। ফলে পদ গেলেও আক্ষেপ নেই তাঁর।