কালীগঞ্জ বিধানসভা উপ-নির্বাচনের ভোট গণনা ঘিরে উত্তেজনার পারদ চড়ছে। নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত গণনা পদ্ধতি নিয়েই একাধিক রাজনৈতিক দল প্রশ্ন তুলেছে। মূল আপত্তি উঠেছে গণনার ধীরগতি এবং গণনার টেবিলের সংখ্যাকে ঘিরে। রাজনৈতিক দলগুলির আশঙ্কা এরফলে ভোট গণনা শেষ হতে দেরি হবে।
আরও পড়ুন: সকাল থেকেই বৃষ্টি, বিরোধীদের বসতে বাধা, কালীগঞ্জে উপভোট ঘিরে উত্তেজনা বহু বুথে
সোমবার সকাল ৮টা থেকে পানিঘাটা উমাদাস স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোট গণনা শুরু হবে। জানা গিয়েছে, মোট দুটি কক্ষে ১৬টি টেবিল বসানো হয়েছে। প্রতিটি ঘরে থাকবে ৮টি করে টেবিল। এর মধ্যে ১৪টি টেবিলে ইভিএম গণনা হবে এবং ২টি টেবিলে ব্যালট গোনা হবে। ৩০৯টি বুথের ভোট গণনার জন্য ২২ রাউন্ড সময় লাগবে বলে জানানো হয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলির আশঙ্কা, প্রতি রাউন্ডে প্রায় আধ ঘণ্টা সময় লাগলে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ হতে রাত আটটা বা তারও বেশি সময় লেগে যেতে পারে। তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিএম-কংগ্রেস জোট এবং বিজেপি তিন শিবিরই নিজেদের মতামত তুলে ধরেছে গণনা পদ্ধতি নিয়ে। বাম-কংগ্রেস জোটের দাবি, গণনা প্রক্রিয়াকে ইচ্ছাকৃতভাবে ধীর করে দেওয়া হচ্ছে, যার ফলে ভোটগণনার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সিপিএম নেতাদের অভিযোগ, অতীতে গভীর রাতে গণনার সুযোগ নিয়ে শাসক দল কারচুপি করেছে। এবারও সেই আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
তৃণমূল কংগ্রেসও অভিযোগ করেছে, আগে যেখানে ৩২টি টেবিলে গণনার পরিকল্পনা ছিল, এখন তা অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। এবিষয়ে দলের এক নেতা বলছেন, ফল প্রকাশে দেরি হলে তা নিয়ে বিভ্রান্তি এবং উত্তেজনা ছড়াতে পারে। সিসিটিভি বদল, কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে নিরীক্ষকের ‘গোপন’ বৈঠকসহ একাধিক বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে ঘাসফুল শিবির।
অন্যদিকে, বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই নির্বাচন কমিশন এবং নিরীক্ষকরা পদক্ষেপ নিচ্ছেন। কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার এক বিজেপি নেতার বক্তব্য, স্বচ্ছ গণনার জন্য কমিশনের পদক্ষেপ স্বাগত জানানোর মতো। তবে কংগ্রেসের অভিযোগ, ভোটগণনার শেষের দিকে বিজেপি-প্রভাবিত মাটিয়ারি ফরিদপুর এলাকার বুথ রাখা হয়েছে, যাতে রাত বাড়লে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে অনৈতিকভাবে ফল ঘোরানোর সুযোগ তৈরি হয়।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, গণনাকেন্দ্র ইতিমধ্যেই নিরাপত্তা বলয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে এক কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। জেলাশাসক এস অরুণ প্রসাদ এবং কৃষ্ণনগর জেলা পুলিস সুপার অমরনাথ কে শনিবার পরিদর্শনে যান গণনা কেন্দ্রে। কর্মকর্তারা পর্যায়ক্রমে নজরদারি চালাচ্ছেন যাতে কোনওরকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। গণনা পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনাকে ঘিরে এই বিতর্ক উপনির্বাচনের পরিবেশকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে। স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার দাবিতে যেভাবে রাজনৈতিক দলগুলি সরব হয়েছে, তাতে ভোটগণনার দিন উত্তেজনার পারদ আরও চড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পর্যবেক্ষকেরা।