আদালত সূত্রের খবর, ২০১৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার দিকে ঝাড়গ্রামের এক প্রত্যন্ত গ্রামে ঘটে বিভীষিকাময় এই ঘটনা। অভিযোগ, ওইদিন নিজের ৭০ বছর বয়সি ঠাকুমা তারুবালা বেরাকে টেনে হিঁচড়ে বাড়ি থেকে বের করে কালীমন্দিরে নিয়ে যান নাতি রাধাকান্ত বেরা।
কলকাতা হাইকোর্ট
ডাইনি সন্দেহে নিজের ঠাকুমার মুণ্ডচ্ছেদের মতো নারকীয় ঘটনার দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিল নাতি। তবে সেই সাজা মকুব করে কলকাতা হাই কোর্ট জানিয়ে দিল এই মামলা 'বিরল থেকে বিরলতম' নয়। ফলে সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল হাইকোর্ট।
আদালত সূত্রের খবর, ২০১৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার দিকে ঝাড়গ্রামের এক প্রত্যন্ত গ্রামে ঘটে বিভীষিকাময় এই ঘটনা। অভিযোগ, ওইদিন নিজের ৭০ বছর বয়সি ঠাকুমা তারুবালা বেরাকে টেনে হিঁচড়ে বাড়ি থেকে বের করে কালীমন্দিরে নিয়ে যান নাতি রাধাকান্ত বেরা। সেখানে ঠাকুমাকে প্রণাম করিয়ে আচমকা তাঁর গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ মারেন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বৃদ্ধার। গলা কেটে মাথা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর ঠাকুমার কাটা মাথা হাতে নিয়ে রাধাকান্ত নাচতে নাচতে বাড়ি ফেরেন। ঘটনায় গ্রামে ছড়ায় আতঙ্ক। তদন্তে উঠে আসে, রাধাকান্ত বিশ্বাস করতেন তাঁর ঠাকুমা একজন ‘ডাইনি’। তাঁর জীবনের নানা দুর্ভাগ্যের জন্য ঠাকুমাই দায়ী। সেই বিশ্বাস থেকেই ‘বলি’ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করে অভিযুক্ত।
ঝাড়গ্রামের আদালত ঘটনার নৃশংসতা বিবেচনায় রাধাকান্তকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে। তবে সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাই কোর্টে আপিল করেন তিনি। মঙ্গলবার সেই মামলার শুনানি হয় বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চে। আদালত জানায়, অভিযুক্তের বয়স ২৮। তাঁর কোনও পূর্ব অপরাধের রেকর্ড নেই, এবং তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছিলেন বলে প্রমাণ মিলেছে। আদালত আরও বলে, বাসের ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে তাঁর মানসিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়েছিল এবং কারাগারে তাঁর আচরণও ইতিবাচক ছিল। এইসব দিক বিবেচনা করে হাই কোর্ট মনে করে, এই ঘটনা অত্যন্ত ভয়াবহ হলেও এটি ‘বিরলতম’ অপরাধ নয়, যেখানে মৃত্যুদণ্ড অপরিহার্য। তাই মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয় আদালত।