বিধানসভা ভোটের আগে ফের নাগরিকত্ব ইস্যুতে উত্তাল রাজনীতি। বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনার বাগদায় সিএএ কার্যকর হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নাগরিকত্বের জন্য আবেদনপত্র সংগ্রহের শিবির করল বিজেপি। এলাকাটি আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় বহু উদ্বাস্তু পরিবারের বসবাস সেখানে। বিজেপির দাবি, এই ক্যাম্পের মাধ্যমে প্রায় ৪০ জন নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন। যদিও এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক।
আরও পড়ুন: CAA হতে দেবেন না বললেও তা কার্যকর বাংলায়, এবার ওয়াকফে 'না' মমতার, জবাবে BJP বলল…
বাগদার চুয়াটিয়া এলাকায় আয়োজিত এই শিবিরটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন বিজেপি নেতা ও বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা সৌরভ গোয়ালি। তাঁর দাবি, যাঁরা বহুদিন ধরে ভারতে বসবাস করছেন অথচ এখনও নাগরিকত্ব পাননি, তাঁদের সাহায্য করতেই এই শিবিরের আয়োজন। সৌরভবাবুর ভাষায়, আবেদনপত্রগুলি অনলাইনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে পাঠানো হবে। প্রয়োজনীয় নথি ঠিকঠাক থাকলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই তাঁরা নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন।
তবে বিজেপির এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, ভোটের মুখে রাজনৈতিক সুবিধা তুলতেই এই ধরনের ক্যাম্প চালাচ্ছে বিজেপি। বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ভোটের আগেই বিজেপি সিএএ তুলে এনে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়। সাধারণ মানুষের আবেগকে পুঁজি করে নোংরা রাজনীতি করছে। একইসঙ্গে তিনি প্রশ্ন তোলেন, যে দেশবাসীর ভোটে সাংসদ নির্বাচিত হন, তাঁদের নাগরিকত্ব নিয়ে আবার সংশয় কীসের?
মতুয়া সম্প্রদায়ের অভ্যন্তরেও বিভাজনের সুর শোনা যাচ্ছে। মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি ও তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর এই ক্যাম্পের বিরোধিতা করে বলেন, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর মতুয়াদের ভুল পথে চালাচ্ছেন। বিষয়টি তিনি প্রশাসন ও মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর করবেন। এমন ধরনের উদ্যোগ মেনে নেওয়া যায় না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্যাম্পে যাঁরা আবেদন করেছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই আশির দশক বা নব্বইয়ের শুরুতে বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসেছিলেন। যেমন, এক আবেদনকারী যুধিষ্ঠিরবাবু জানান, ১৯৯৩ সালে তিনি বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসে বাগদার মাথাভাঙা গ্রামে বসবাস শুরু করেন। তাঁর কথায়, তাঁর কাছে অতীতের এবং বর্তমানের ঠিকানা সংক্রান্ত নথি ছিল। সঙ্গে একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের শংসাপত্রও জমা দিয়েছেন।
ওই অঞ্চলের বিজেপি নেতাদের দাবি, বহু মানুষ দীর্ঘদিন ধরে নাগরিকত্বের দাবিতে সরকারি দফতরের দ্বারে দ্বারে ঘুরে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তাঁদের কথা মাথায় রেখেই এই ক্যাম্পের আয়োজন। যদিও বিরোধীদের প্রশ্ন, রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে কীভাবে নাগরিকত্বের আবেদন নেওয়ার মতো ক্যাম্প আয়োজন করা যায়?