ডেঙ্গুর মধ্যেই জলপাইগুড়িতে নতুন করে আতঙ্ক ছড়াল ‘জাপানি এনকেফালাইটিস’। মশাবাহিত এই ভাইরাল রোগে চলতি বছরে আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচজন। মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল তিন জনে। এই খবর পাওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রশাসন ও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। কলকাতা থেকে স্বাস্থ্য আধিকারিকরা সেখানে ছুটে যান এলাকা পরিদর্শনে।
আরও পড়ুন: বড় সাফল্য, রাজ্যের প্রথম ডেঙ্গু মুক্ত অঞ্চল হয়ে উঠল পানিহাটি, রিপোর্ট সুডার
জানা যাচ্ছে, মৃতরা জলপাইগুড়ি সদর, ডাবগ্রাম এবং বানারহাট এলাকার বাসিন্দা। আক্রান্তদের মধ্যে এক জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন, অপরজন জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থাও উদ্বেগজনক নয় বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। রবিবার কলকাতা থেকে বিশেষভাবে পাঠানো হয় স্বাস্থ্য দফতরের চিকিৎসক তাপস রায়কে। তিনি জেলা পরিদর্শনের পাশাপাশি বাহাদুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাও ঘুরে দেখেন। কারণ বর্তমানে যিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তিনি ওই এলাকার বাসিন্দা। রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা সরেজমিনে খতিয়ে দেখেন তিনি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, জাপানি এনকেফালাইটিস প্রথমে জ্বর, মাথাব্যথা, সর্দি-কাশির মাধ্যমে শরীরে প্রভাব ফেলে। পরে তা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে আঘাত হানে। অসাড়তা, খিঁচুনি এবং পক্ষাঘাতের মতো জটিল উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যার পরিণতি হতে পারে মৃত্যু, যদি না সময়মতো সঠিক চিকিৎসা হয়।
এই রোগ সাধারণত শূকরের শরীরে জন্মায় এবং ছড়ায় মশার মাধ্যমে। তাই আক্রান্ত অঞ্চলে শূকর পালন কেন্দ্র বা খাটালগুলিতে কড়া নজরদারি চালাচ্ছে প্রশাসন। ইতিমধ্যেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, জায়গায় জায়গায় ঘুরে বেড়ানো শূকরগুলিকে সরাতে হবে ও অবৈধ খাটাল বন্ধ করতে হবে। এমনকি যেখানে রোগীর সন্ধান মিলেছে, সেখানকার আশপাশেও ঘন ঘন শূকর চরে বেড়াতে দেখা গিয়েছে, যা নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানিয়েছেন, এটা সাধারণ কোনও জ্বর নয়। এনকেফালাইটিস দ্রুত ছড়াতে পারে এবং প্রাণঘাতী হতে পারে। তাই যাঁরা শূকর পালন করছেন, তাঁদের দ্রুত স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ মেনে চলতে হবে। জেলায় অতীতেও এনকেফালাইটিস ভয়াবহ আকারে দেখা গিয়েছে, তবে এত দ্রুত মৃত্যুর ঘটনা সাম্প্রতিক অতীতে দেখা যায়নি। স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা মনে করছেন, বর্ষার জল জমা ও এলাকায় শূকরের সংস্পর্শ মশার বংশবিস্তারে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করছে। সেই কারণে একদিকে যেমন মশা নিয়ন্ত্রণে অভিযান চলছে, অন্যদিকে নজরদারি চলছে পশুপালনের দিকেও। এখনই সতর্ক না হলে পরিস্থিতি ভয়ানক আকার নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা। সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার ও উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।