রাখি পূর্ণিমা মানেই একটি প্রচলিত ধারণা, এটি ভাই-বোনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু আদতে রাখি বাঁধার ঐতিহ্য কিন্তু শুরু হয়েছিল সম্পূর্ণ অন্য পথ ধরে। পুরাণ বলছে, স্বামীর হাতে বহুবার ভালোবাসা ও সুরক্ষার চিহ্নস্বরূপ রাখি বেঁধে দিয়েছেন স্ত্রী। সেখান থেকেই সূচনা রাখি পূর্ণিমার পবিত্র সংস্কৃতির।
অথ ইন্দ্র উবাচ
বৃতাসুরের সঙ্গে যুদ্ধের আগে দেবগুরু বৃহস্পতির স্মরণাপন্ন হলেন দেবরাজ ইন্দ্র। আশীর্বাদ নেওয়ার পর জানতে চাইলেন জয়পরাজয়ের সম্ভাবনা নিয়ে। দেবগুরু জানান, এই যুদ্ধে হয় ইন্দ্রের জয় হবে, নয় মৃত্যু। বৃহস্পতির এই বচন শোনার যারপরনাই শঙ্কিত হয়ে পড়েন ইন্দ্রের ঘরণী দেবী ইন্দ্রাণী। তৎক্ষণাৎ তিনি স্মরণ করেন ভগবান বিষ্ণুকে। ভগবান আবির্ভূত হয়ে দেবী ইন্দ্রাণীকে আশ্বস্ত করে একটি রাখি বা রক্ষাসূত্র দেন। ইন্দ্রাণী এই রাখিই বেঁধে দিয়েছিলেন দেবরাজ ইন্দ্রের হাতে। কথিত আছে, এই পৌরাণিক ঘটনার মধ্যে দিয়েই রাখি পূর্ণিমা উদযাপনের সূচনা।
আরও পড়ুন - Rakhi Bandhan 2025: পরতে পরতে রহস্য! রাখিবন্ধনে মাত্র ১ দিনের জন্য খোলা হয় এই মন্দির, কী কারণ?
মহারাজ বলি ও দেবী লক্ষ্মী অ্যাখ্যান
মহারাজ বলি তাঁর গভীর তপস্যায় তুষ্ট করেছিলেন ভগবান বিষ্ণুকে। বিষ্ণুর প্রতি তাঁর ভক্তি ছিল সর্বজনবিদিত। তপস্য দুষ্টু হয়ে ভগবান বলিতে দেখা দেন। মহারাজ বলি তখন ভগবানের কাছে অনুরোধ করে তার প্রাসাতে থাকবার। বৈকুণ্ঠপতি বিষ্ণু সেই অনুরোধ রাখেন। কিন্তু এতে অসন্তুষ্ট হন বিষ্ণুঘরণী দেবী লক্ষ্মী। দীর্ঘদিন ভগবানের বিরহে তিনি অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন। এর পর এক হতদরিদ্র ব্রাহ্মণীর বেশ ধারণ করে মহারাজ বলির দরজায় এসে উপস্থিত হন দেবী। দেবীকে বলি সাদরে অভ্যর্থনা জানান। এতেই দেবী তুষ্ট হয়ে ভ্রাতৃপ্রতিম স্নেহে বলির হাতে রাখি বেঁধে দেন, তাঁকে রক্ষা করার চিহ্ন হিসেবে। বলি মহালক্ষ্মীকে চিনতে পেরে বিষ্ণুকে বৈকুন্ঠে ফিরে যেতে আর বাধা দেননি। তার পরিবর্তে ভগবান বিষ্ণুও রক্ষা করেন বলির রাজ্য।
আরও পড়ুন - Budh Gochar: রাখির দিন কর্কট রাশিতে দেখা দিচ্ছেন বুধ! সোনায় সোহাগা ৬ রাশির, লটারিতেও লাভ
কৃষ্ণের প্রতিশ্রুতি
মহাভারতের যুদ্ধের বহু আগে শিশুপাল বধ করেন শ্রীকৃষ্ণ। সুদর্শন চক্র ছুঁড়ে শিশুপালকে হত্যার সময় হাতের আঙুল কেটে যায় কৃষ্ণের। তখনই সেখানে উপস্থিত হন তার ভগিনী দ্রৌপদী। নিজের শাড়ি থেকে কাপড় ছিঁড়ে তার আঙুলে বেঁধে দেন পাণ্ডবঘরণী। এর পরেই কৃষ্ণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সমস্ত বিপদে দ্রৌপদীকে রক্ষার। মহাভারতে পাশা খেলার পর দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করে কৌরবেরা। এই সময় কৃষ্ণ দ্রৌপদীকে অনন্ত বস্ত্র জোগান।