শুরুটা হয়েছিল সুন্দর বিয়ে দিয়ে, আর শেষটা হল মৃত্যুতে। তবে মৃত্যুর আগে নিজের দেহে খুনিদের তালিকা লিখে রেখে গিয়েছে সেই 'মৃতদেহ'। এটি কোনও থ্রিলার গল্প নয়। এটি উত্তরপ্রদেশের বাগপতের রাঠৌড়া গ্রামের বাসিন্দা ২৮ বছর বয়সি মনীষার করুণ কাহিনী। নিজের সংসার গড়ার স্বপ্ন পূরণের আগেই বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি। আর মৃত্যুর আগে নিজের হাতে ও পায়ে লিখে গিয়েছিলেন এই মর্মান্তিক পরিণামের জন্য দায়ী কারা।
পুলিশ সূত্রে খবর, ২০২৩ সালে নয়ডার বাাসিন্দা কুন্দনের সঙ্গে মনীষার বিয়ে হয়। শুরুতে সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল। আচমকায় ছন্দপতন শুরু করে মনীষার জীবন। পণের জন্য বেরিয়ে আস্তে শুরু করে শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের কুৎসিত রূপ।বিয়ের পরপরই, তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা আরও যৌতুকের জিনিসপত্র দাবি করতে থাকে। তাঁকে নানাভাবে কষ্ট দেয়। সূত্রে জানা গিয়েছে যে, তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা ক্রমাগত তাঁর সঙ্গে শারীরিক নির্যাতন করে। এমনকি গর্ভপাত করতে বাধ্য করে তাঁকে। এরপর তাঁর শারিরীক কষ্ট আরও বেড়ে যায়। জানা গিয়েছে আত্মহত্যার আগে, মনীষা তাঁর শরীরে একটি চিরকুট লিখেছিলেন। তাতে তিনি যে যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন তা প্রকাশ করেন।
মণীষার বাবা এবং গাজিয়াবাদের এক এমসিডি কর্মচারী তেজবীর জানিয়েছেন যে তাঁর বিয়ের মাত্র পাঁচ মাস এর মাথায় এই ঝামেলা শুরু হয়েছিল। তাঁর মতে, কুন্দন এবং তাঁর পরিবার প্রচুর অর্থ দাবি করতে শুরু করে। খবর অনুযায়ী বিয়ের সময় পরিবারটি ইতিমধ্যেই যৌতুক হিসাবে একটি বুলেট মোটরসাইকেল দিয়েছিল। কিন্তু এরপর দাবি আরও বাড়তে থাকে। যখন তরুণীর পরিবার তাঁদের দাবি পূরণ করতে পারেনি, তখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায়। মণীষা তার রেখে যাওয়া নোটে উল্লেখ করেছেন যে কেবল তাঁকে চাপ দেওয়া হয়নি, বরং তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে অন্যদের সামনে চূড়ান্ত অপমান করাও হয়েছিল। তাঁর হাতে লেখা ছিল, 'কুন্দন বলত আমি যদি কাউকে কিছু বলি তাহলে আমায় মেরে ফেলবে। আমাকে ঘরে বন্ধ করে খুব মারত। খাবার বা জল কিচ্ছু দিত না।' তাঁর পায়ে লেখা ছিল, 'আমার মৃত্যুর জন্য আমার স্বামী কুন্দন, শাশুড়ি, শ্বশুর, দেওর দীপক এবং বিশাল দায়ী। তারা পঞ্চায়েতের সামনে আমার পরিবারকে হত্যার হুমকি দিয়েছিল।' এর সঙ্গে মনীষা একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। সেখানেও তিনি তাঁর মৃত্যুর জন্য স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকদের দায়ী করেছেন।
জানা গিয়েছে, তেজবীর কুন্দনকে তাঁর মেয়ের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদে রাজি করাতে প্রায় সক্ষম হন। এর ফলে, কুন্দনের পক্ষের আত্মীয়স্বজন তাঁদের বাড়িতে আসেন। এরপর উভয় পরিবার সিদ্ধান্ত নেন যে বিয়ের জিনিসপত্র এবং যাবতীয় খরচ ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু যখন আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সময় এসেছিল, তখন মনীষা সবকিছু ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত বিবাহবিচ্ছেদের কাগজপত্রে স্বাক্ষর করতে মানা করেন। এরপর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। পরিবার মারফত তিনি একপ্রকার আটকা পড়েছিলেন, একই সঙ্গে প্রচণ্ড চাপের মধ্যে ছিলেন।এই পরিস্থিতিতে মনীষা কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা করার চরম সিদ্ধান্ত নেন।
ইতিমধ্যে গোটা ঘটনাটি তদন্ত করছে পুলিশ। বাগপতের এএসপি এনপি সিং জানিয়েছেন, পুলিশ মৃতদেহটি ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে। বিষ খেয়েই আত্মহত্যা তা নিশ্চিত। তদন্ত চলছে।বর্তমানে মনীষার শ্বশুড়বাড়ির লোককে জেরা করা হয়েছে। দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।