রোগা ছিপছিপে চেহারা বানাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হলেন এক গৃহবধূ। তাঁর অভিযোগ, দিনে তিন ঘণ্টা শরীরচর্চা করার জন্য বাধ্য করেন স্বামী। শরীরচর্চা না করলে, খাবার খেতেও দিতেন না স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা। অতিরিক্ত ওজন নয়, এত শারীরিক কসরতের কারণ সম্পূর্ণ ভিন্ন। স্বামী চান, বলিউড অভিনেত্রীদের মতোই স্ত্রীর ফিগার হবে। বিশেষত অভিনেত্রী নোহা ফতেহির ফিগার তাঁর সবচেয়ে পছন্দ। এমনকী নোরার মতো লাস্যময়ী শরীরের জন্যে স্ত্রীকে জোর করে গর্ভপাতের ওষুধও খাওয়ান স্বামী।
৭৭ লক্ষের বিয়ে
জানা গেছে, এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদে। গত ৬ মার্চ ২০২৫ সালে সানুর সঙ্গে শিবম উজ্জ্বল নামে এক শিক্ষকের সঙ্গে দেখাশোনা করে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়েতে সানুর পরিবার প্রায় ৭৭ লক্ষ টাকা খরচ করেছিল। এমনকী পণ হিসেবে ১৬ লক্ষ টাকার সোনার গয়না, ২৪ লক্ষ টাকার স্করপিও গাড়ি, নগদ ১০ লক্ষ টাকা দিয়েছে শিবমের পরিবারকে। ২৬ বছর বয়সি সানু জানিয়েছেন, বিয়ের পর তাঁর জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হওয়ায় খুব খুশি ছিলেন। কিন্তু বিয়ের কয়েক সপ্তাহ পরেই দুঃস্বপ্নের মতো অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন তিনি। স্বামীর সঙ্গে বাইরে বেরোতে দিতেন না শাশুড়ি। সারাদিন বাড়ির কাজেই তাঁকে ব্যস্ত রাখতেন। এমনকী স্বামীর সঙ্গে বাড়িতেও সময় কাটাতে দিতেন না। শিবম একটি সরকারি স্কুলের ফিজিক্যাল এডুকেশন বিভাগের শিক্ষক। বাড়ির ছোটখাটো বিষয় নিয়ে অকথ্য গালিগালাজ করতেন সানুকে। এমনকী পরিবারের সামনেই তাঁকে মারধর করতেন।
নোরা ফতেহির মতো ফিগারের জন্য নির্যাতন
সানুর অভিযোগ, স্বামী তাকে নিয়মিত শারীরিক নির্যাতন ও বডি শেমিং করতেন। গৃহবধূ জানিয়েছেন, শিবমের আশা ছিল নোরা ফতেহির মতো লাস্যময়ী কোনও তরুণী তাঁর জীবনসঙ্গী হবেন। একাধিকবার এও বলেছিলেন, এই বিয়ে করে তিনি পস্তাচ্ছেন। সানু জানান, 'আমি ফর্সা এবং লম্বা হওয়া সত্ত্বেও শরীর নিয়ে প্রায়ই খোঁটা দিতেন শিবম ও তাঁর পরিবার। একাধিকবার বডি শেমিংয়ের শিকার হয়েছি। মহিলাদের অশ্লীল ভিডিও, ছবি দেখতেন শিবম। ইউটিউব ও ইনস্টাগ্রামে অশ্লীল ভিডিও দেখেই কাটাতেন। আমার চেয়ে অন্য মেয়েদের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন তিনি।' সানু আরও জানিয়েছেন, দিনে তিন ঘণ্টা করে শরীরচর্চা করতে বাধ্য করতেন সানুকে। কোনও একদিন শরীরচর্চা না করলে, বা কম সময় এক্সারসাইজ করলে, পরপর কিছুদিন খেতেও দিতেন না।
গোপনীয়তার অভাব ও পণের দাবি
সানুর বেডরুমের দরজা বন্ধ করার অনুমতিও ছিল না। যখন তখন কাউকে না জানিয়েই শ্বশুর ঢুকে পড়তেন ঘরে। একবার তো শিবম তাঁর মুখে ডায়েরি ছুঁড়ে মারেন। এ নিয়ে অভিযোগ করলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন উল্টো নতুন জামাকাপড় ও ওভেন টোস্টার গ্রিলার আনার জন্য বাবার বাড়িতে যেতে বলেন।এছাড়াও শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে নিয়মিত নগদ টাকা, জমি, গয়না ও দামি পোশাক দাবি করা হতো। দাবি না মানলে সানুকে মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হতো।একবার সানু মাহি নামের এক তরুণীর সঙ্গে খোশ গল্প করতেও দেখেছিলেন শিবমকে। বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই, কষিয়ে থাপ্পড় মারেন শিবম।
জোরপূর্বক গর্ভপাত
এক পর্যায়ে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবর জানালে সানু ভেবেছিলেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন হয়তো খুশি হবে। কিন্তু তারা একে কোন রকম গুরুত্বই দেয়নি। উল্টে কয়েক দিনের মধ্যেই ননদ রুচি তাকে একটি গর্ভপাতের ওষুধ খাওয়ান।শিবম বলেন, 'যখন আমাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারেনি, তখন সন্তানকেও মেনে নেবে না।' সানুর দাবি, গর্ভবতী হওয়ার পর তাঁকে এমন কিছু খাবার দেওয়া হত, যাতে তাঁর স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। ২০২৫ সালের ৯ জুলাই অতিরিক্ত রক্তপাত ও অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেই সময়ই চিকিৎসকরাও জানান, মানসিক ও শারীরিক অত্যাচারের কারণেই তাঁর গর্ভপাত হয়েছিল।
গত ১৮ জুন অসুস্থ অবস্থায় সানুকে তার বাবা-মায়ের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেদিনই স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকেরা ফোন করে তাকে গালিগালাজ করে এবং ডিভোর্সের হুমকি দেয়।পরে ২৬ জুলাই শ্বশুরবাড়ি ফিরে গেলে সানুকে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। এমনকি তার গয়না ও জামাকাপড়ও ফেরত দেয়নি।এরপর থেকে সানু তার বাবা-মায়ের সঙ্গেই থাকছেন।গত ১৪ আগস্ট শিবম ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেন সানু। পাশাপাশি ইচ্ছাকৃতভাবে গর্ভপাত, পণের অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। অভিযোগে তিনি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।