২৮ জুলাই রাত ১০টা নাগাদ দিল্লি থেকে শীর্ষ স্থানীয় কর্তার ফোন করা হয় চণ্ডীগড় সিএফএসএল-এর ডিরেক্টরের কাছে। সংস্থার সেরা কর্মীদের নিয়ে একটি দল গঠন করার জন্য বলা হয়েছিল তাঁকে। অপারেশন মহাদেবে নিহত জঙ্গিদের সঙ্গে পহেলগাঁও হামলার যোগ স্থাপন করতে চটজলদি রিপোর্ট তৈরি করতে বলা হয় সিএফএসএল ডিরেক্টরকে। এবং সারারাত কাজ করে ২৯ জুলাই ভোর ৪টে ৪৫ মিনিটে তৈরি করা হয় সেই রিপোর্ট। তাতে বলা হয়, ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও জঙ্গি হামলায় ব্যবহৃত বন্দুক পাওয়া গিয়েছে নিহত জঙ্গিদের কাছ থেকে।
এর আগে মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদকে জানিয়েছেন, সোমবার অপারেশন মহাদেবের হামলায় পহেলগাঁওয়ের তিন জঙ্গি সুলেমান, আফগান ও জিবরানের মৃত্যু হয়েছে। তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এ অভিযান চালানো হয়েছে। এই অপারেশন মহাদেবে নিহত জঙ্গিদের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত ভোটার কার্ড, চকোলেটের মোড়ক পাকিস্তানে তৈরি।
উল্লেখ্য, জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সাম্প্রতিক অপারেশন সিঁদুরে নিহত সন্ত্রাসবাদীদের নাগরিকত্ব নিয়ে কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরমের প্রশ্ন তুলেছিলেন। এরই জবাবে অমিত শাহ 'প্রাপ্ত প্রমাণের' উল্লেখ করেন সাংসদে। লোকসভায় অধিবেশনে বক্তব্য রাখার সময় অমিত শাহ বলেন, কেন্দ্র সুনির্দিষ্ট প্রমাণ জোগাড় করেছে, যা নিশ্চিত করে যে জঙ্গিরা পাকিস্তান থেকে এসেছে। তিনি আরও জানান, প্রমাণপত্রের মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানি ভোটার আইডি নম্বর এবং নিহত জঙ্গিদের কাছে পাওয়া পাকিস্তানে তৈরি চকোলেটের মোড়ক।
সূত্রের খবর, এই অভিযানের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল বেশ কয়েকদিন আগেই। এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুলেমান শাহ আগে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এলিট ইউনিটের কমান্ডো ছিল। পরে সে হাফিজ সইদের দল লস্কর-ই-তৈবায় যোগ দেয়। আধিকারিকদের মতে, সেনা অভিযানে নিহত অন্য জঙ্গি জিবরান গত বছর সোনমার্গ টানেলে হামলায় জড়িত ছিল বলে অভিযোগ। জানা যায়, কিছুদিন আগে জঙ্গিরা টি৮২ আল্ট্রাস্যাট কমিউনিকেশন ডিভাইস সক্রিয় করেছিল। এটি এক ধরণের স্যাটেলাইট ফোন। পহেলগাঁও হামলার সময় সন্ত্রাসবাদীরা এই স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার করেছিল। এই যন্ত্র দিয়েই জঙ্গিদের সম্পর্কে জানতে পেরেছে সেনা। সেনাবাহিনী তাদের ওপর নজরদারি চালাতে শুরু করে। এই আবহে সেনা অপেক্ষা করেছিল, কখন সন্ত্রাসীরা এমন একটি জায়গায় যাবে, যেখানে তাদের ফাঁদে ফেলা যাবে।
এই আবহে গত ২৮ জুলাই সকাল ৮টা নাগাদ সেনার একটি ড্রোন সন্ত্রাসীদের অবস্থান শনাক্ত করে। এরপরই রাষ্ট্রীয় রাইফেলস ও প্যারা স্পেশাল ফোর্সের কমান্ডোরা মহাদেব পাহাড়ে উঠতে শুরু করেন। আধ ঘণ্টার মধ্যেই জঙ্গিদের সঠিক অবস্থান জানতে পারে সেনা। বেলা ১১টার দিকে সেনাবাহিনী গুলি চালাতে শুরু করে। প্রথম সন্ত্রাসী নিহত হয় ৪৫ মিনিটের মধ্যে। এরপরই দুই কিলোমিটার এলাকা ঘিরে ফেলে জঙ্গিদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করে সেনা। এর প্রায় এক ঘণ্টা পর আরও দুই জঙ্গিকে খতম করা হয়। আর এই জঙ্গিরা খতম হতে না হতেই ওপার থেকে ফের জঙ্গিদের ভারতে পাঠানোর চেষ্টা করল পাকিস্তান।