মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত কয়েকদিন ধরে ভারতের বিরুদ্ধে সুর নরম করেছেন। গতকাল তিনি সবার আগে মোদীকে জন্মদিনের 'আগাম শুভেচ্ছা' জানিয়েছেন। তবে কয়েকদিন আগে পর্যন্ত তিনি ভারত বিরোধী কড়া বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন। এ ছাড়াও, রাশিয়ান তেল কেনার কারণে ভারতের উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল আমেরিকার তরফ থেকে। এই আবহে ভারতের পণ্যের ওপর মোট ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করেছে আমেরিকা। তবে ভারতে এই শুল্কের চাপে মাথা নত করেনি। বরং রাশিয়ান তেল ইস্যুতে নিজেদের অবস্থানে অনড় থেকে আমেরিকাকে সুর বদল করতে বাধ্য করেছে। রাশিয়ার সঙ্গে এখনও একই সম্পর্ক বজায় রেখেছে ভারত। ভারতের রিফাইনারগুলি রাশিয়ার তেল কেনার ক্ষেত্রে কোনও বিধিনিষেধ আরোপ করেনি।
এহেন পরিস্থিতিতে জানা গেল, সেপ্টেম্বরের প্রথম পক্ষকালে ভারতীয় বন্দরে যে রুশ তেলের চালান পৌঁছেছে তা জুলাই ও অগস্টের চেয়ে বেশি ছিল। যা থেকে স্পষ্ট, মার্কিন চাপের তাৎক্ষণিক কোনও প্রভাব ভারতের ওপর পড়েনি। প্রাথমিক ট্যাঙ্কার ট্র্যাকিং ডেটা উদ্ধৃত করে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে, ভারত প্রতিদিন গড়ে ১.৭৩ মিলিয়ন ব্যারেল রাশিয়ান তেল আমদানি করেছে। তুলনামূলকভাবে, জুলাই এবং অগস্টে এই সংখ্যাটি যথাক্রমে ১.৫৯ এবং ১.৬৬ মিলিয়ন ব্যারেল (প্রতিদিন) ছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের ট্যারিফের আসল প্রভাব কতটা পড়েছে, তা বোঝা যাবে সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবরের তেল আমদানির পরিসংখ্যান থেকে। সাধারণত রাশিয়ান অপরিশোধিত তেলের চুক্তিগুলি ৬-৮ সপ্তাহ আগে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অর্থাৎ সেপ্টেম্বরের শুরুতে যে সরবরাহ করা হয়েছিল তা আসলে জুলাইয়ে বুক করা হয়েছিল। রাশিয়ার বন্দরগুলি সেপ্টেম্বরে প্রতিদিন ১২.২ লাখ ব্যারেল তেল লোড করেছে ভারতে পাঠাবে বলে। যদিও প্রকৃত সংখ্যাটি প্রায় ১৬ লক্ষ ব্যারেল পর্যন্ত যেতে পারে। কারণ অনেক ট্যাঙ্কারের রুট মিশরের পোর্ট সইদে পর্যন্ত আছে। যদিও পরে সেগুলি সেখান থেকে ভারতে এসে থাকতে পারে।
এদিকে ভারত সরকার প্রথম থেকেই মার্কিন শুল্ক পদক্ষেপকে অযৌক্তিক এবং অবাস্তব বলে বর্ণনা করে এসেছে। বিদেশ মন্ত্রণালয় বলছে, ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেই ভারতকে রাশিয়ান তেল কিনতে উৎসাহিত করেছিল। বিশ্বব্যাপী জ্বালানি বাজার যাতে স্থিতিশীল থাকতে পারে, তাই তখন আমেরিকা ভারতকে রুশ তেল কিনতে বলেছিল। ভারত বারবার বলেছে যে যেখান থেকে সস্তা তেল পাওয়া যায় সেখান থেকেই তারা কিনবে। যেহেতু রাশিয়ার তেলের ওপর সরাসরি কোনও বিধিনিষেধ নেই, তাই আমদানি অব্যাহত থাকবে। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল শোধনাগার সংস্থাগুলিও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা সরকারের কাছ থেকে কোনও নতুন নির্দেশনা পায়নি। ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল উপভোক্তা এবং তার অপরিশোধিত তেলের চাহিদার প্রায় ৮৮ শতাংশই আমদানি করা হয়। রাশিয়া থেকে ভর্তুকিযুক্ত তেলের ফলে গত তিন বছরে ভারত কয়েক বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় করেছে। ২০২২ সালে যখন রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করেছিল, তখন ভারতের মোট তেল আমদানিতে রাশিয়ার অংশ ছিল মাত্র ২%। আজ রাশিয়া ভারতের বৃহত্তম তেল সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে, যা মোট আমদানির এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি।