নেভি মার্চেন্ট অফিসার সৌরভ রাজপুতের নৃশংশ খুনে শিউরে উঠেছে উত্তরপ্রদেশের মীরাট। এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই হাড়হিম করা নতুন নতুন তথ্য সামনে আসছে পুলিশের। এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ্যে এসেছে স্বামী সৌরভকে হত্যার আগে মুসকান রাস্তোগির সপরিবারে নাচের একটি ভিডিয়ো। ৪ সেকেন্ডের ওই ভিডিয়োটি তদন্তে নতুন মোড় নিয়েছে। (আরও পড়ুন: কর্ণাটকে হানিট্র্যাপে ৪৮ রাজনীতিবিদ? CD দেখাল BJP, বিধানসভায় বলল - 'প্রমাণ আছে')
দাবি করা হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিটি সৌরভ হত্যাকাণ্ডের কিছু মুহূর্ত আগের। সৌরভ একমাত্র কন্যার ৬ বছরের জন্মদিন উপলক্ষে লন্ডন থেকে বাড়িতে এসেছিলেন। ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, মেয়ের জন্মদিনে উপলক্ষ্যে স্ত্রী মুসকান রাস্তোগির সঙ্গে গানের তালে নেচেছেন সৌরভ। সঙ্গে তাদের ছোট্ট মেয়েও রয়েছে। ছোট্ট ওই ভিডিয়ো ক্লিপে হাসিখুশি দেখা গিয়েছে তিন জনকে। ভিডিয়োতে মুসকানকে দেখে একবারের জন্যও বোঝা যায়নি যে, সে আড়ালে প্রেমিক সাহিলের সঙ্গে নিজের স্বামীকে হত্যার যড়যন্ত্র করছিল।সৌরভ দেশে আসার মাত্র কয়েকদিন আগে উদ্বেগ ও অনিদ্রায় ভোগার অছিলায় ডাক্তারের কাছে যান ও প্রেসক্রিপশনে ঘুমের ওষুধ লিখিয়ে নেন মুস্কান। ২২০ লিটারের একটি জলের ড্রাম, ৫০ কেজি সিমেন্টও কিনে নিয়ে আসেন। (আরও পড়ুন: কুণালের দাবি ৩০, সহমত নন দেবাংশু, অঙ্ক কষে বললেন, এর থেকে অনেক বেশি আসন পাবে BJP)
আরও পড়ুন: 'চিন যুদ্ধের' গোপন তথ্য মাস্কের কাছে? NYT রিপোর্টে চাঞ্চল্য, ট্রাম্প বললেন…
তদন্তকারীরা জানতে পারেন, সৌরভের খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেন মুসকান। এর আগেও যখন বাড়িতে এসেছিলেন নভেম্বরে, তখনও সৌরভের খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়েছিলেন স্ত্রী মুসকান। কিন্তু গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হলেও অচৈতন্য হয়ে না পড়ায় খুনের পরিকল্পনা তখন ভেস্তে গিয়েছিল। সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার ওষুধের ডোজ বাড়িয়ে খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে দেন। সেই খাবার খেয়ে সৌরভ অচৈতন্য হয়ে পড়েন। অচৈতন্য হতেই সৌরভের বুকে একের পর এক ছুরির কোপ বসিয়ে দিয়েছিলেন মুসকান। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে হাজির হন সাহিল। বাজার থেকে কিনে আনা মাংস কাটার ছুরি দিয়ে সৌরভের মাথা ধড় থেকে আলাদা করে দেন সাহিল। রাতেই সৌরভের দেহ টুকরো করেন দু’জনে মিলে। তারপর নীল ড্রামের মধ্যে সিমেন্ট ঢালেন। আবার সিমেন্ট গুলে ড্রামের মুখ আটকে দেন, যাতে দেহাংশের কোনও চিহ্নই কেউ খুঁজে না পান। সেই ড্রামটিকে ফেলে আসার পরিকল্পনা ছিল দু’জনের। সন্দেহ যাতে না হয়, তাই দু’জনে মিলে আগে হিমাচল প্রদেশে ঘুরতে চলে যান। সেখান থেকে সোমবার বাড়িতে ফিরে ওই ড্রাম ফেলে আসার পরিকল্পনা ছিল মুসকান এবং সাহিলের। কিন্তু তার আগেই ধরা পড়ে যান তাঁরা।
আরও পড়ুন: কপাল পুড়ল অগ্নিকাণ্ডে? ঘর থেকে উদ্ধার টাকার পাহাড়, কে এই হাইকোর্টের বিচারপতি?
পুলিশ সূত্রে খবর, ২০১৬ সালে সৌরভ ও মুসকান বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। প্রেমের সম্পর্ক পরিণতি পাওয়ায় খুব খুশি ছিলেন দু'জনে। স্ত্রীর সঙ্গে আরও সময় কাটানোর জন্য মার্চেন্ট নেভির চাকরি ছেড়ে বাড়িতে চলে আসেন। কিন্তু পারিবারিক অশান্তির কারণে এরপর বাড়ি ছেড়ে মুসকানকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকতে শুরু করেন সৌরভ। ২০১৯ সালে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন মুসকান। কিন্তু দিন কয়েক পরেই সৌরভ জানতে পারেন, তাঁর বন্ধু সাহিলের সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত মুসকান। সেই সম্পর্ক ঘিরে অশান্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছয়। ডিভোর্সের পথে এগিয়েও, সন্তানের কথা ভেবে পিছিয়ে আসেন সৌরভ। ফের নেভির চাকরি নিয়ে ২০২৩ সালে ভিন দেশে চলে যান। মেয়ের ছ'বছরের জন্মদিন উপলক্ষে ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশে ফেরেন সৌরভ। এরপরেই তাঁকে খুন করেন মুসকান এবং সাহিল।