মার্কিন ডোনাল্ড ট্রাম্পের 'শুল্ক বোমা'র পরেই বিশ্ব রাজনীতিতে একাধিক নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত মিলেছে। এরমধ্যে অন্যতম হল ভারত, রাশিয়া এবং চিনের কৌশলগত সম্পর্কে উন্নতি। এই আবহে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ডাকে এসসিও (সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন) শীর্ষ সম্মেলনে জড়ো হতে চলেছেন বিশ্বের প্রায় ২০ জন রাষ্ট্রনেতা। তারমধ্যে অন্যতম ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আর এই দুই রাষ্ট্রনেতাকে স্বাগত জানাতে তৈরি চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
রয়টার্স-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগামী ৩১ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর চিনের উত্তরাঞ্চলীয় বন্দরনগরী তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের শীর্ষ সম্মেলন।এই আঞ্চলিক নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিতে গ্লোবাল সাউথের ২০ জনেরও বেশি নেতা আগামী সপ্তাহে চিনে যাচ্ছেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পাশাপাশি মধ্য এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতি।কারণ,২০২০ সালে গালওয়ান সংঘর্ষ এবং সাত বছরেরও বেশি সময় পর প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রথমবার চিন সফরে যাচ্ছেন। বস্তুত, ২০১৯ সালে শেষবার চিন সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।এরমধ্যে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং শি জিনপিং-কে সর্বশেষ একই মঞ্চে দেখা গিয়েছিল গত বছর রাশিয়ার কাজানে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনে।
আরও পড়ুন-‘মেক ফর দ্য ওয়ার্ল্ড’…' ই-ভিটারার উদ্বোধন মোদীর, ভারতের গাড়ি ১০০ দেশে রপ্তানির পরিকল্পনা!
রয়টার্স-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, নয়া দিল্লির রুশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা গত সপ্তাহে জানিয়েছিলেন, মস্কো আশা করছে শিগগিরই ভারত ও চিনের সঙ্গে তাদের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে গবেষণা সংস্থা 'দ্য চায়না-গ্লোবাল সাউথ প্রজেক্টে'র প্রধান সম্পাদক এরিক ওলান্ডার বলেছেন, 'জিনপিং চাইছেন সম্মেলনকে ব্যবহার করে মার্কিন আধিপত্য থেকে মুক্ত আন্তর্জাতিক দুনিয়ার ছবিটা কেমন হতে চলেছে তা তুলে ধরা। মনে রাখতে হবে গত জানুয়ারি থেকে চিন, ইরান, রাশিয়ার পর ভারতের বিরুদ্ধেও আক্রমণাত্মক হয়েছে হোয়াইট হাউস। কিন্তু এতে কোনও প্রভাব পড়েনি।' গত সপ্তাহে চিনের বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, ২০০১ সালে এসসিও প্রতিষ্ঠার পর থেকে এবারই সবচেয়ে বড় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই সম্মেলন ‘নতুন ধরনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি’ হিসেবে কাজ করবে বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন-‘মেক ফর দ্য ওয়ার্ল্ড’…' ই-ভিটারার উদ্বোধন মোদীর, ভারতের গাড়ি ১০০ দেশে রপ্তানির পরিকল্পনা!
২০০১ সালে গঠিত হওয়ার পর থেকে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন পরিধি ক্রমাগত বেড়েছে। বর্তমানে এতে ১০টি স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র, এবং আরও ১৬টি পর্যবেক্ষক ও সংলাপ ভিত্তিক দেশ রয়েছে। নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা দিয়ে শুরু হলেও বর্তমানে অর্থনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতার বিষয়গুলোও আলোচনায় আসে। তবে সমালোচকদের মতে, বাস্তব সহযোগিতার ক্ষেত্রে এসসিও-এর ভূমিকা এখনও সীমিত। ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব এর বড় উদাহরণ। তবু সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-চিনের মধ্যে বরফ গলার ইঙ্গিত মিলেছে।পাশাপাশি ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এই সম্মেলন গ্লোবাল সাউথের সংহতির শক্তিশালী প্রদর্শনী হবে ধারণা বিশ্লেষকদের।