ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রার পাকিস্তানি যোগসূত্র নিয়ে তদন্ত চলছে। এসবের মধ্য়েই জানা গেছে যে পাকিস্তান হাই কমিশনের বহিষ্কৃত কর্মী এহসান-উর-রহিম ওরফে দানিশ দিল্লিতে প্রায় দুই ডজন ব্যক্তিকে নিয়োগের চেষ্টা করেছিলেন যারা ইসলামাবাদে ভিসার জন্য আবেদন করেছিলেন বা আবেদনকারীর আত্মীয় ছিলেন। খবর হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে।
স্পেশাল ব্রাঞ্চের এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, দিল্লি পুলিশের গোয়েন্দা শাখার পাকিস্তান ডেস্ক এনিয়ে সতর্ক করার পরেই এনিয়ে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করা হয়েছিল। এরপর প্রায় ২৫ জনকে পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তবে তাদের বিরুদ্ধে কোনও অপরাধমূলক প্রমাণ পাওয়া যায়নি, ফলস্বরূপ তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
জানা গেছে যে হাই কমিশনের কর্মী এই ব্যক্তিদের নিজেদের অধীনে আনার যে চেষ্টা করেছিল সেটা শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি।
দিল্লি পুলিশের তদন্তে আরও উঠে এসেছে যে দানিশ একজন ভিসা অফিসার বলে হাই কমিশনের তরফে যে দাবি করা হয়েছিল তা পুরো মিথ্যা ছিল। বরং তিনি পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার অফিসার ছিলেন।
একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'তিনি (দানিশ) শোয়েব নামে একজন সিনিয়র আইএসআই অফিসারকে রিপোর্ট করছিলেন এবং প্রভাবশালী নিয়োগের পাশাপাশি ভারতীয় সিম কার্ডের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। দানিশের পাসপোর্ট ইসলামাবাদে ইস্যু করা হয়েছিল এবং ২০২২ সালের ২১ জানুয়ারি তাকে ভারতের ভিসা দেওয়া হয়েছিল। নথি অনুযায়ী, দানিশের জন্ম পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের নারোয়ালে।
পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার (পিআইও) সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগে গত সপ্তাহে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় হরিয়ানার ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রাকে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেছেন, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত ড্যানিশের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল।
বুধবার পুলিশ আধিকারিকরা জানিয়েছেন, মালহোত্রা জেনেশুনে পিআইও-দের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলেও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বা পরিচিত সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁর যোগসূত্রের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
হিসারের পুলিশ সুপার বলেন, 'এখনও পর্যন্ত আমরা কোনও জঙ্গি কার্যকলাপে তার জড়িত থাকার বা কোনও জঙ্গি গোষ্ঠীর সাথে তার যোগসাজশের কোনও প্রমাণ পাইনি।
মালহোত্রা সহ ১২ জনকে পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশ পুলিশ পাকিস্তানি গুপ্তচরবৃত্তির অভিযানে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করেছিল।
পাকিস্তান হাই কমিশন এবং গুপ্তচরবৃত্তির কাজ
রাজধানীতে পাকিস্তান হাই কমিশনের গুপ্তচরবৃত্তির ক্রিয়াকলাপের সাথে যুক্ত থাকার অতীতেক একাধিক ঘটনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্রের কথা উল্লেখ করে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, আইএসআই তাদের এজেন্টদের হাইকমিশনে অন্তর্ভুক্ত করে এবং তারপর তাদের অফিসের বিভিন্ন পোস্টিংয়ে আবর্তিত করতে থাকে।
পাকিস্তানি গোয়েন্দা আধিকারিকদের (পিআইও) জিজ্ঞাসাবাদে প্রমাণিত হয়েছে যে আইএসআই জাল পাসপোর্ট দিয়ে ভুয়া পরিচয়ে হাইকমিশনে পাঠানোর আগে পাক সেনা অফিসারদের অন্তর্ভুক্ত করে এবং তাদের গুপ্তচরবৃত্তির প্রশিক্ষণ দেয়।
২০২০ সালের মে মাসে দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল সামরিক গোয়েন্দাদের সঙ্গে মিলে এমন একটি ষড়যন্ত্র বানচাল করে দেয়, যেখানে ভিসা অফিসার সেজে দুই আধিকারিক আইএসআই এজেন্টদের কাছে চলে যান। আবিদ হুসেন ও তাহির খানকে চিহ্নিত করে অগ্রাহ্য ঘোষণা করে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এর পরে পাকিস্তান হাইকমিশনের সামগ্রিক শক্তি ১৮০ থেকে ৯০-এ নামিয়ে আনা হয়।
২০২১ সালে একটি স্টিং অপারেশনের ফলে কর্মকর্তারা জানতে পারেন যে হাই কমিশনের একজন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ভিসা অফিসার আইএসআইয়ের হয়ে কাজ করছিলেন।
২০১৬ সালে আইএসআই অফিসার মেহমুদ আখতার হাই কমিশনে ভিসা অফিসার সেজে ধরা পড়েছিলেন। তার দুই ভারতীয় সহযোগী ধরা পড়লেও আখতারকে তার কূটনৈতিক দায়মুক্তির কারণে ছেড়ে দিতে হয়েছিল। আইএসআই তাকে ২০১৩ সালে নিয়োগ করেছিল এবং তাকে দিল্লিতে পাকিস্তানি হাই কমিশনে পোস্টিংয়ের জন্য পাঠিয়েছিল।