হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা করছিলেন। সেই হাসপাতালেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন কার্ডিয়াক সার্জন ডা. গ্র্যাডলিন রয়। ঘটনার সময়ও তিনি হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় ছিলেন।আর এই তরুণ হার্ট সার্জনের আকস্মিক মৃত্যু চিকিৎসকদের সুস্থতা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। দীর্ঘ সময় কাজের চাপ, মানসিক চাপ, অনিয়মিত জীবনযাপন-সহ নানা কারণে চিকিৎসকরাই ক্রমশ হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিতে পড়ছেন বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন। (আরও পড়ুন: কেউ চিরকাল বন্ধু বা শত্রু থাকে না, ট্যারিফ তরজার আবহে বড় মন্তব্য রাজনাথের)
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের বেশিরভাগ শুল্ককে অবৈধ ঘোষণা করল মার্কিন আদালত, মাথায় বাজ প্রেসিডেন্টের
জানা গেছে, চেন্নাইয়ের সাভিথা মেডিকেল কলেজের কনসালট্যান্ট কার্ডিয়াক সার্জন কর্তব্যরত অবস্থায় বুধবার হাসপাতালেই পড়ে যান। পরে তার মৃত্যু হয়। তার স্ত্রী এবং এক সন্তান রয়েছে।হায়দরাবাদের নিউরোলজিস্ট ডা. সুধীর কুমার বলেন, ডা. রয়ের সহকর্মীরা তাঁকে বাঁচানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পারেননি। এক্সে পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘সহকর্মীরা বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেছেন- সিপিআর, স্টেন্টিং-সহ জরুরি এনজিওপ্লাস্টি, ইন্ট্রা-অর্টিক বেলুন পাম্প, এমনকী ইসিএমও ব্যবহার করে। কিন্তু ১০০ শতাংশ বাম প্রধান ধমনীতে ব্লকেজের কারণে বড় ধরনের হার্ট অ্যাটাক হয়, ফলে তার সেই ক্ষতি এড়ানো যায়নি।’পোস্টে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ড. রয়ের মৃত্যু কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় এবং ৩০-৪০-এর দশকের তরুণ ডাক্তারদের হঠাৎ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা এই ধরনের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। ডাক্তাররা প্রায়শই দিনে ১২-১৮ ঘণ্টা কাজ করেন, কখনও কখনও এক শিফটে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে কাজ করেন। (আরও পড়ুন: উপরাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফার পর পেনশনের আবেদন ধনখড়ের, কত টাকা পাবেন তিনি?)
তীব্র চাপও রয়েছে। জীবন-মৃত্যুর সিদ্ধান্তের ক্রমাগত চাপ, রোগীর উচ্চ প্রত্যাশা এবং চিকিৎসা-আইনি উদ্বেগের প্রভাব পড়ে ব্যক্তিগত জীবন ও সুস্থ চলাচলে। অন্যান্য কারণগুলির মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা, অনিয়মিত খাবার, শারীরিক ব্যায়ামের অভাব এবং অবহেলিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা।
হার্ট অ্যাটাক কেন হয়?
হার্ট অ্যাটাক বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন ঘটে যখন হার্টের পেশিতে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এটি নীরবে ঘটতে পারে এবং হঠাৎ মৃত্যুর কারণ হতে পারে। সাধারণত করোনারি ধমনীতে রক্তপ্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার ফলে হার্ট পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না। রোগীরা অনেক সময় বুকে অস্বস্তি, গলা, চোয়াল বা কাঁধে চাপ অনুভব করে থাকেন। ক্লিনিকাল তথ্য অনুযায়ী, করোনারি আর্টারি ডিজিজ হার্ট অ্যাটাকের প্রধান কারণ।আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজির তথ্য অনুযায়ী, গত এক দশকে ৪০ বছরের নিচের মানুষের হার্ট অ্যাটাকের হার প্রতি বছর ২ শতাংশ বেড়েছে। আর আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৩৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সীদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের হার ৩০ শতাংশ বেড়েছে।তাদের গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যে সব তরুণ নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাদ্য, ব্যায়াম ও ঘুম অনুসরণ করেছেন, তাদের রক্তনালী অনেক বেশি সুস্থ ছিল। অন্যদিকে, খারাপ অভ্যাস দীর্ঘমেয়াদে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।