গত কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে দিল্লিতে। তার জেরে ফুঁসছে যমুনা নদী। ইতিমধ্যে বিপদসীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে জল।ফলে বন্যা আতঙ্কের বাতাবরণ ছড়িয়েছে রাজধানী শহরের একাধিক এলাকায়।স্থানীয় প্রশাসন ও সেচ দফতর জানাচ্ছে, প্রতি ঘণ্টায় জলস্তর কিছুটা করে বাড়ছে, যা আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার দিল্লির ওল্ড রেলওয়ে ব্রিজের কাছে যমুনার জলস্তর ২০৪.৮৮ মিটার ছুঁয়েছে, যা বিপদমাত্রা ২০৪.৫০ মিটারের থেকেও বেশি। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, আশপাশের অঞ্চলে বন্যা-পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে যে কোনও সময়। সমস্ত দফতরকে সতর্ক করা হয়েছে। আগাম ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে দফতরগুলিকে। শুধু রাজধানী নয়, গত কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা এবং উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন অংশে। তার জেরে নদীগুলিতেও জল বাড়তে শুরু করেছে। কোথাও কোথাও আবার বিপদসীমা ছাপিয়ে গিয়ে লোকালয়ে জল ঢুকে পড়েছে। আতঙ্কিত হয়ে নিচু এলাকাগুলি থেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছেন মানুষজন।টানা বৃষ্টির জেরে উত্তরপ্রদেশের ১৭ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি বারাণসী এবং প্রয়াগরাজের।
আরও পড়ুন-প্রাকৃতিক রোষের বলি উত্তরকাশী! বাড়ছে মৃত্যুমিছিল, এখনও উদ্ধার ক'জন? নিখোঁজ কত?
গত শনিবার থেকেই বারাণসীর নিচু এলাকাগুলিতে গঙ্গার জলের স্তর বেড়েছে। বৃষ্টি বাড়লে পরিস্থিতি যে আরও খারাপ হবে, সেই আতঙ্কেই ভুগছেন স্থানীয়েরা। লাগাতার বৃষ্টির জেরে গঙ্গার জলস্তর বিপদসীমা ছুঁয়ে ফেলেছে বারাণসীতে। এই পরিস্থিতিতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে তাই গঙ্গার ঘাটগুলিতে নজরদারি চালানো হচ্ছে। গঙ্গায় ফেরি চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বারাণসীর অলিগলিতে গঙ্গার জল ঢুকে পড়েছে। নমো ঘাট, অসসি ঘাট ডুবে গিয়েছে। বসতি এলাকায় জল ঢুকে পড়ায় নৌকা করে উদ্ধারকাজ চালানো হচ্ছে।কেন্দ্রীয় জল কমিশনের রিপোর্ট বলছে, বারাণসীতে গঙ্গার জল সোমবার সকালেই বিপদসীমা ৭১.২৬২ মিটার ছাড়িয়ে পৌঁছেছিল ৭২.১ মিটারে। ফলে শহরের প্রায় সমস্ত ঘাট প্লাবিত হয়েছিল। ঘাটের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ প্লাবিত জেলাগুলিতে নজরদারি এবং ত্রাণকাজ চালানোর জন্য ১১টি দল গঠন করেছেন।
আরও পড়ুন-প্রাকৃতিক রোষের বলি উত্তরকাশী! বাড়ছে মৃত্যুমিছিল, এখনও উদ্ধার ক'জন? নিখোঁজ কত?
অন্যদিকে, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে উত্তরাখণ্ডের বহু জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ঋষিকেশে বৃষ্টির কারণে গঙ্গা নদীর জলস্তর বাড়ছে।গঙ্গার জল ছুঁয়ে ফেলেছে পরমার্থ নিকেতনে গঙ্গার পাশে ধ্যানমগ্ন শিবের বিশাল মূর্তি।সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, ঋষিকেশের আরতিস্থলে শিবের মূর্তির চারপাশ দিয়ে ভয়ঙ্কর রূপে ছুটে চলেছে গঙ্গা। ২০১৩ সালের বন্যায় এই মূর্তি ভেঙে গিয়েছিল বলে খবর রটেছিল। কিন্তু বন্যার জলে ডুবে গেলেও, ১৪ ফুট মূর্তিটি ভাঙেনি।এরমধ্যেই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিকার হিমাচল প্রদেশের কিন্নর। মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে হড়পা বানে ভেসে যায় টাংলিং নালার উপরের অস্থায়ী দুটি সেতু। আটকে পড়েন বহু পর্যটক। খবর পাওয়া মাত্র ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা। জিপলাইনে উদ্ধার ৪১৩ জন পর্যটক। সকলেই তীর্থযাত্রী বলে জানা গিয়েছে। রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ-র তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের ২০ জুন থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত হিমাচলে ১৯৯ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং মোট ১৯০৫.৫ কোটি টাকারও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।