ভোটার তালিকা কারচুপির অভিযোগে সুর চড়িয়েছে কংগ্রেস। দেশজুড়ে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোটচুরির অভিযোগ তুলে বিরোধীদের এককাট্টা করতে বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর পাশাপাশি সামনের সারিতে দেখা যাচ্ছে তৃণমূল সাংসদ তথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে।দিল্লির রাজপথে উঠছে স্লোগান। এবার রাহুল গান্ধীর সাম্প্রতিক মন্তব্যের জবাবে বিজেপির তরফে তীব্র আক্রমণ শানালেন দলের সিনিয়র নেতা ও সাংসদ অনুরাগ ঠাকুর।সেই সঙ্গে অভিষেকের লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবার নিয়ে সুর চড়াতে দেখা গেল প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে।
বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপি নেতা অনুরাগ ঠাকুর বলেন, 'নির্বাচন কমিশন ও বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে দেশের জনগণের ভোটাধিকারকে ছোটো করতে চায় কংগ্রেস ও বিরোধীরা। দেশের মানুষ বারবার কংগ্রেসকে প্রত্যাখ্যান করেছে। সেজন্য তারা অনুপ্রবেশকারীদের হাতে রেখে ভোটব্যাঙ্ক বাড়াতে চায়। রাহুল গান্ধী মস্ত ভুল করছেন। নির্বাচনের সময়ও মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াতে সংবিধান সম্পর্কে মিথ্যা প্রচার চালিয়েছেন তাঁরা। এখন ফের মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন। আসলে কংগ্রেসের আর কোনও ইস্যু অবশিষ্ট নেই।' এরপরেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাহুলের সঙ্গে এক সারিতে রেখে অনুরাগ উদাহরণ টেনে বলেন, 'উত্তরপ্রদেশের রায়বরেলিতে ৮৩, ১৫১, ২১৮ নম্বর বুথে এক ব্যক্তির নাম বারবার রয়েছে। ১৮৯ নম্বর বাড়ির এক বুথে নথিভুক্ত ৪৭ জন ভোটার। আবার ডায়মন্ড হারবারের ১০৩ নম্বর বাড়ির ০০১১ নম্বর বাড়িতে বহু ধর্মের ভোটারের নাম মিলেছ। খুরশিদ আলম নামের এক ভোটারের বাবার নাম প্রতিবার বদলে যাচ্ছে।এক জায়গায় ৫২ জন ভোটার আছেন। রায়বরেলি ও ডায়মন্ড হারবারের বহু স্থানে এমন ঘটনা রয়েছে-এগুলি কি রাহুল বা অভিষেকের অজানা?'
আরও পড়ুন-Meat Ban Controversy: স্বাধীনতা দিবসে নিষিদ্ধ মাংস? তুঙ্গে বিতর্ক, চড়ছে রাজনৈতিক পারদ
ফলতা, ডায়মন্ড হারবার, বিষ্ণুপুর, মহেশতলা, বজবজ নিয়ে আলাদা আলাদা পরিসংখ্যান দিয়ে অভিষেকের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে অনুরাগ বলেন, 'ডায়মন্ড হারবারে ৩০১টি বুথে ১৫ শতাংশ ভোটার বৃদ্ধি হয়েছে গত ৪ বছরে। সব জায়গায় তৃণমূল জিতেছে। তাহলে কী ভুয়ো ভোটার দিয়েই আপনি ভোটে জিতছেন?' তিনি আরও দাবি করেন, 'শুধুমাত্র প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকদেরই ভোটাধিকার থাকা উচিত। অথচ অনেকেই ৩-৪টি বুথে ভোট দিচ্ছেন। এই অনিয়মে রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী কি পদত্যাগ করবেন?'তাঁর কথায়, কেরলের ওয়ানাডে ৯৩,৪৯৯ জন সন্দেহজনক ভোটার রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ২০,৪৩৮ জন নকল ভোটার, ১৭,৪৫০ জন ভুয়ো ঠিকানার ভোটার, ৪২৪৬ জন মিশ্র পরিবারের ভোটার এবং ৫১,৩৬৫ জন ভোটার গণসংযোগের মাধ্যমে যুক্ত হয়েছেন। রাহুল গান্ধী এবং তারপরে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এই আসন থেকে জয়ী হন। শুধু কংগ্রেস বা তৃণমূল নয়, ইন্ডিয়া জোটের শরিক সমাজবাদী এবং ডিএমকেও নিশানা করেছে বিজেপি। পরিসংখ্যান তুলে ধরে অনুরাগ ঠাকুর বলেন, কনৌজে ২,৯১,৭৯৮ জন সন্দেহজনক ভোটার এবং মৈনপুরিতে ২,৫৫,৯১৪ জন সন্দেহজনক ভোটার ছিলেন, এই আসনগুলি যথাক্রমে অখিলেশ যাদব এবং ডিম্পল যাদব জিতেছেন।
আরও পড়ুন-Meat Ban Controversy: স্বাধীনতা দিবসে নিষিদ্ধ মাংস? তুঙ্গে বিতর্ক, চড়ছে রাজনৈতিক পারদ
অন্যদিকে বিজেপি দাবি করেছে, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিনের কেন্দ্র কোলাথুরে প্রায় ২০,০০০ সন্দেহজনক ভোটার রয়েছে। পাশাপাশি মহারাষ্ট্র নির্বাচনের সময়ও রাহুল ভোট চুরির অভিযোগ তুলেছিলেন বলে স্মরণ করিয়ে দিয়ে অনুরাগের মন্তব্য, 'সেই সময়ের পরিসংখ্যানও প্রমাণ করে, কংগ্রেস মিথ্যা বলছে।' এই সংঘাত যে আরও তীব্র হতে চলেছে, তা দুই শিবিরের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট। ভোট প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা ঘিরে জাতীয় রাজনীতিতে যে নতুন করে ঝড় উঠতে চলেছে, বুধবারের এই পাল্টাপাল্টি আক্রমণ তারই পূর্বাভাস।