প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে বিচার ব্যবস্থা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করলেন বাংলাদেশের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি অভিযোগ করেছেন, গত ১৫ বছর ধরে বিচার ব্যবস্থারকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট থেকে শুরু করে উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে বেনিয়ম হয়েছে। এই অবস্থায় মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষা করার জন্য সৎ এবং ভালো বিচারপতি নিয়োগের পরামর্শ দেন উপদেষ্টা। পাশাপাশি ৫২ বছর আগের একটি সংবিধান তাদের কাজ যে থামিয়ে দেবে তা তিনি মানতে রাজি নন।
আরও পড়ুন: ‘দিনের পর দিন অনির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা থাকা উচিত নয়’, সুর চড়াল বিএনপি
বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ অধ্যাদেশ ২০২৪ শীর্ষক একটি মত বিনিময়ে সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের উপদেষ্টা। তিনি বলেন, উচ্চ আদালতে আরও যোগ্য এবং নিবেদিত বিচারপতিদের দায়িত্ব দিতে হবে। কিছু ভালো বিচারপতি নিয়োগ করতে হবে। আইন উপদেষ্টা বলেন, উচ্চ আদালতকে মানবাধিকার হরণ এবং মানুষের ওপর নির্যাতন চালানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। তিনি মনে করেন, সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের ব্যাপকভাবে ক্ষমতাশালী করা হয়েছে। ফলে এই প্রতিষ্ঠান যদি নষ্ট করা যায়, তাহলে বাংলাদেশে কোনও দমনমূলক সরকার ক্ষমতায় আসলে মানবাধিকার দমন করার অবাধ সুযোগ পাবে। আর এই কাজটাই গত ১৫ বছরে করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী খাদিজাতুল কোবরার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আপিলেট ডিভিশন তাঁর জামিনের আবেদনের শুনানি দেরি করেছিল শুধু তাকে বেশিদিন জেলে রাখার জন্য। এছাড়াও বহু জঘন্য ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, ‘৫২ বছর আগের একটি সংবিধান আমাদের কাজ থামিয়ে দেবে, তা আমরা মানতে রাজি নই।’
উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে কাজ করার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, এই বিচারপতিরা সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীনে মৌলিক বিষয় ছাড়াও অন্য বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
এছাড়াও, বিচারপতি নিয়োগ অনিয়মের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারেরে আমলে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। উচ্চ আদালতে এমন বিচারপতি নিয়োগ হয়েছিলেন যারা পরীক্ষায় ফেল করেছিলেন। এমনকী আদালতে পর্যন্ত প্র্যাকটিস করেননি। তিনি জানান, এই সব সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি কাজ করবেন। তবে উপদেষ্টার অভিযোগ, শুধুমাত্র উচ্চ আদালতে নয়, প্রধান বিচারপতিসহ সর্বোচ্চ আদালতে নিয়োগের ক্ষেত্রেও বেনিয়ম হয়েছে। এপ্রসঙ্গে বর্তমান প্রধান বিচারপতির প্রশংসা করেন তিনি।