'ভারতীয় বায়ুসেনা ৫০টিরও কম অস্ত্র ব্যবহার করে পাকিস্তানকে যুদ্ধবিরতির আলোচনায় বসতে বাধ্য করে।' এমনটাই দাবি করেছেন বায়ুসেনার উপপ্রধান এয়ার মার্শাল নর্মদেশ্বর তিওয়ারি। পহেলগাঁও হামলার পর পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গি ঘাঁটিতে ভারতের সামরিক অভিযানের নতুন ভিডিও ও তথ্য সামনে এনেছেন তিনি।
শনিবার এনডিটিভি ডিফেন্স সামিটে ভারতীয় বায়ুসেনার গোপন সামরিক অভিযান ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর নতুন এক তথ্য সামনে এসেছে। জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁও-এ সংঘটিত ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিরীহ মানুষ নিহত হওয়ার পরপরই এই অভিযান শুরু হয়েছিল। এদিন এয়ার মার্শাল নর্মদেশ্বর তিওয়ারি বলেন, 'আমাদের কাছে শত্রুপক্ষের অনেকগুলি টার্গেটের তালিকা ছিল। শেষ পর্যন্ত তা নেমে আসে ৯টি টার্গেটে।সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ৫০টিরও কম অস্ত্র ব্যবহার করেই আমরা হামলা চালাই এবং শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির আলোচনায় বসতে বাধ্য হয়।' তিনি আরও বলেন, 'অপারেশন সিঁদুরের পর এই প্রথমবার, বায়ুসেনা হিসেবে আমরা একটি পাবলিক ফোরামে কথা বলছি... যখন পহেলগাঁও হামলার পরের দিনই, তিন বাহিনীই নিজের সদর দফতরে মিলিত হয় এবং সম্ভাব্য পরিকল্পনা শুরু করে। এই পরিকল্পনা এবং আকস্মিক পরিস্থিতির জন্য আমরা কিছু সময় প্রস্তুতি নিই।'
তাঁর আরও সংযোজন, দিল্লির তরফে সেনাকে তিনটি সুস্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল - এক, জবাব দিতে হবে মনে রাখার মতো, দুই, শত্রুপক্ষ যেন কড়া সতর্কবার্তা পায় এবং বাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হবে, পরিস্থিতি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে গেলেও।এয়ার মার্শাল নর্মদেশ্বর তিওয়ারি বলেন, 'যুদ্ধ শুরু করা যত সহজ, শেষ করা ততটাই কঠিন। তবে আমাদের বাহিনী যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য তৈরি ছিল।' তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট যে বায়ুসেনা ভবিষ্যতে আরও আধুনিক প্রযুক্তি এবং নিখুঁত আঘাতের ক্ষমতা অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অপারেশন সিঁদুর শুধু এক সামরিক অভিযানের নাম নয়, এটি ভারতের আত্মবিশ্বাস, কৌশলগত পরিপক্বতা এবং রাষ্ট্রসুরক্ষায় দৃঢ় অবস্থানের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
এই সম্মেলনে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংও ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি জানান, আধুনিক যুদ্ধে আকাশ প্রতিরক্ষার গুরুত্ব বহুগুণ বেড়েছে। তাই নয়া ‘সুদর্শন চক্র মিশন’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় গেম চেঞ্জার হতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বাধীনতা দিবসের ভাষণেই এই প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন।
‘অপারেশন সিঁদুর’
গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বৈসরণ উপত্যকায় নিরীহ পর্যটকদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায় জঙ্গিরা। ২৬ জন নিরীহের প্রাণ যায়। এর পাল্টা গত ৭মে 'অপারেশন সিঁদুর' চালিয়ে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয় ভারতীয় সেনাবাহিনী। এরপর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে তীব্র উত্তেজনা ছড়ায়। যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়।ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলির জনবহুল এলাকা এবং সেনাঘাঁটিকে লক্ষ্য করে হামলা চালায় পাকিস্তান। সেই হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি প্রত্যাঘাত করে ভারত। তাতেই তছনছ হয়ে যায় পাকিস্তানের অন্তত ১১টি একধিক বায়ু সেনাঘাঁটি। ভারতীয় সেনার অভিযানে নিহত হয় ১০০ জনের বেশি জঙ্গি ও ৩৫-৪০ জন পাক সেনা। শেষ পর্যন্ত ১০ মে ইসলামাবাদের আর্জিতে সংঘর্ষবিরতিতে রাজি হয় নয়া দিল্লি।