আপনার সোনামণি যাতে সুস্থ থাকে তার জন্য সদা সতর্ক থাকে সকল মা। কিন্তু নতুন মায়েরা অনেক সময়ই টেনশনে ভোগেন, কোনটা তাঁর বাচ্চার জন্য ঠিক আর কোনটা ক্ষতিকর। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বেশ কিছু রীতি ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ভারতের নানান পরিবারে মেনে চলা হয়। কিন্তু সেই সকল রীতি বা অভ্যাস আপনার একরত্তির ভয়ঙ্কর বিপদ ডেকে আনতে পারে, তাই মায়েরা এখনই সচেতন হন।
বাড়ির বড়োরা অনেক সময়ই বাচ্চার নাক টিকালো করার জন্য একটি বাচ্চার নাক টানা, কান এবং নাকে তেল লাগানো এবং আরও অনেক কিছুর মতো কৌশলগুলি অনুশীলন করতে দেখেছেন। কিন্তু এই অভ্যাসগুলো কতটা উপকারী বা ক্ষতিকর? ১০টি জিনিস যা আপনার কখনই করা উচিত নয় বা আপনার শিশুকে দেওয়া উচিত নয় তা ভাগ করে নিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ সাঁচি রাস্তোগি নিজেও একজন মা। তিনি এই ১০টি জিনিস ভাগ করে নিয়েছিলেন যা তিনি শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ হিসাবে এবং মা হিসাবে তাঁর সন্তানের সাথে কখনই করবেন না। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেগুলি কী কী-
পোস্টটি শেয়ার করে ডাঃ সাঁচি রাস্তোগি লিখেছেন, ‘আমাদের মধ্যে অনেককেই আমাদের প্রবীণ প্রজন্মের দ্বারা প্রচলিত পুরানো অনুশীলনগুলি বাচ্চাদের জন্য অনুসরণ করি। কিন্তু এগুলো অপ্রয়োজনীয় এমনকি ক্ষতিকরও। একজন শিশু বিশেষজ্ঞ এবং মা হিসাবে, আমি এগুলির কোনওটিই অনুসরণ করিনি।’ নতুন বাবা-মায়েদের সাঁচি সতর্ক করেন এই ১০টি জিনিস না করতে।
১. ডাঃ রাস্তোগির মতে, আরও ভাল আকৃতি পেতে অর্থাৎ নাক টিকানো করতে শিশুর নাককে আকার দেওয়া বা টানা বাঞ্ছনীয় নয়। তিনি বলেন, 'পেশি ও হাড় বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মুখের গঠনও বদলে যায়। আপনি একটি ম্যাসেজ দিয়ে এটি পরিবর্তন করতে পারবেন না।
২. শিশুর স্তনবৃন্ত থেকে দুধ বের করা। যা বেদনাদায়ক এবং ম্যাসাটাইটিস বা স্তনের টিস্যুতে সংক্রমণ হতে পারে। বাচ্চাদের স্তন জন্মের পর প্রথম কয়েক সপ্তাহ ফুলে থাকে, যাকে উইচ মিল্ক বলা হয়। মায়ের হরমোনের কারণে শিশুর স্তনে দুধ জাতীয় তরল থাকে। যা কয়েক সপ্তাহ পর কোনওরকম হস্তক্ষেপ ছাড়াই চলে যাবে।
৩. বুকের দুধ খাওয়ানোর পর ঠোঁট মোছার প্রয়োজন নেই। তিনি সতর্ক করে বলেন, 'বুকের দুধ ঠোঁট গাঢ় করে না।
৪. অনেক দেশি পরিবারে কান ও নাকে তেল লাগানো একটি প্রথা রয়েছে। যাইহোক, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ এটি সুপারিশ করেন না কারণ কান এবং নাক আপনা আপনি পরিষ্কার হয়ে যায়।
৫. শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের মতে, শিশুর চোখে কাজল ব্যবহার অনুচিত, কারণ এতে সীসা এবং কার্বন কণা থাকে যা চোখের পক্ষে ভাল নয় এবং সংক্রমণও হতে পারে।
৬. ৬ মাসের আগে কোনও বাচ্চাকে অতিরিক্ত জল দেওয়া অনুচিত, এক কথায় ক্ষতিকারক। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে দিয়েছেন, বুকের দুধে বা ফর্মুলা মিল্কে যে জল থাকে তা বাচ্চার তৃষ্ণা নিবারণ করতে এবং পর্যাপ্ত পুষ্টি সরবরাহ করতে এবং গরম আবহাওয়াতেও ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করতে যথেষ্ট। অতিরিক্ত জল শিশুর অপরিণত কিডনির জন্য অভিশাপ!
৭. কলিক ব্যাথার জন্য বাচ্চা কাঁদলে অনেক সময় বাবা-মা তাদের সন্তানকে গ্রাইপ ওয়াটার খেতে দেন। এটি একধরণের ঘরোয়া টোটকা,সোডিয়াম বাই-কার্বনেট এবং নানা ভেষজ মিলিয়ে তৈরি করা হয় গ্রাইপ ওয়াটার। মৌরী, আদা, ক্যামোমাইল, পিপারমিন্টের মতো ভেষজ ব্যবহার করা হয় গ্রাইপ ওয়াটারে। মনে করা হয় যে, গ্রাইপ ওয়াটার শিশুর পেটের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। তবে, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ এটির পরামর্শ দেন না কারণ উপাদানগুলি শিশুর পক্ষে ক্ষতিকারক হতে পারে।
৮. ট্যালকম পাউডার শিশুর জন্য ক্ষতিকারক, এটি শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘অ্যাসবেস্টসের দূষণের সঙ্গে ক্যান্সারের যোগসূত্র পাওয়া গেছে’
৯. শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের মতে, কোনও শিশুর গায়ের রং ফর্সা করতে তাঁকে নানারকমের ঘরোয়া উবটন মাখানো বাঞ্ছনীয় নয়। এর জেরে ডার্মাটাইটিস হতে পারে। আপনার বাচ্চার গায়ের রং কেমন হবে তা সম্পূর্ণরূপে জিনের উপর নির্ভরশীল, বাবা-মা'র থেকেই শিশু তাঁর গায়ের রং পায়।
১০. মধু দেওয়া এক বছরের কম বয়সী শিশুদের মধু বা মধুযুক্ত খাবার দেওয়া উচিত নয়, কারণ এর থেকে বোটুলিজম হতে পারে, এটি একটি প্রাণঘাতী সংক্রমণ, তাই শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বারবার মা-বাবাদের সতর্ক করেছেন।
পাঠকদের জন্য বিশেষ বিজ্ঞপ্তি: এই নিবন্ধটি শুধুমাত্র তথ্যমূলক উদ্দেশ্যে এবং পেশাদার চিকিৎসা পরামর্শের বিকল্প নয়। কোনও মেডিকেল অবস্থা সম্পর্কে যে কোনও প্রশ্নের থাকল, সর্বদা আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিন।