ইউনিভার্সিটিতে প্রথম দেখা, অচিরেই হিমাচলের পামলপুরের পুরোদস্তুর ফিল্মি ছেলেটার প্রেমে পড়েছিলেন চণ্ডীগড়ের মেয়ে ডিম্পল চিমা। বন্ধুত্ব প্রেম পর্যন্ত গড়াতে সময় নেয়নি, তবে ডিম্পলের সঙ্গে দেখা হওয়ার বহু আগেই নিজের লক্ষ্য স্থির করে ফেলেছিল বিক্রম। ছোট থেকেই দেশের জন্য জান লড়িয়ে দেওয়ার তাগিদ তাঁকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল ইন্ডিয়ান আর্মিতে। মার্চেন্ট নেভির দামী চাকরি ছেড়ে ১৯৯৬ সালে লেফটেন্যান্ট বিক্রম বত্রা হয়ে ইন্ডিয়ান আর্মিতে যোগ দেন বিক্রম।
বিয়ের তারিখ পাকা ছিল, কিন্তু আচমকা কার্গিল যুদ্ধ ডিম্পলের জীবন থেকে চিরতরে কেড়ে নেয় তাঁর মনের মানুষ বিক্রমকে। বিক্রমের মৃত্যুর পর গত ২২ বছরে অবিবাহিতই থেকেছেন ডিম্পল, পরিবারের আর্তি, বিক্রমের বাবা-মা'র শত আবদারও টলাতে পারেনি তাঁর সিদ্ধান্তকে।
সম্প্রতি ডিম্পল চিমাকে নিয়ে এক সাক্ষাত্কারে মুখ খুলেছেন বিক্রম বাত্রার বাবা-মা, গিরিধারী লাল বাত্রা এবং কমল কান্তা বত্রা। এ হিন্দি সংবাদমাধ্যমকে তাঁরা জানান, 'আমরা সন্তান যতক্ষণ না পর্যন্ত ভুলপথে যাচ্ছে, আমি তাঁর সঙ্গে আছি... আমরা স্বাধীন চিন্তাভাবনার মানুষ ছিলাম বরাবর। বিক্রম জানিয়েছিল সে ডিম্পলকে বিয়ে করতে চায়, আমরা সহমত ছিলাম। শুরুতেই আমরা বুঝেছিলাম, ডিম্পল খুব বুঝদার মেয়ে, সম্পর্ককে কীভাবে আগলে রাখতে হয় সেটা ও জানে'।
কার্গিল যু্দ্ধে নিজের সন্তানকে হারানোর দুঃখ বুকে চেপেই ডিম্পলকে জীবনপথে এগিয়ে যেতে অনুরোধ করেছিলেন বাত্রা দম্পতি। গিরিধারীবাবু যোগ করেন, 'আমরা, ডিম্পলের বাবা-মা'কে ওকে বোঝানোর অনেক চেষ্টা করেছিলাম, বলেছিলাম তোমার সামনে গোটা জীবন পড়ে রয়েছে। তুমি সংসার পাতো, বিয়ে করো... না, ও রাজি হয়। বলেছিল বিক্রমের স্মৃতি আঁকড়েই বাকি জীবনটা কাটাতে চায়'।

কার্গিল যুদ্ধে ২৪ বছর বয়সী বিক্রম বত্রার অসীম সাহসিকতার পাশাপাশি বিক্রম-ডিম্পলের প্রেম কাহিনিও একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে সিদ্ধার্থ মালহোত্রা-কিয়ারা আডবানি অভিনীত ‘শেরশাহ’তে। পরিচালক বিষ্ণ বর্ধনের এই ছবিতে ডিম্পল চিমার চরিত্রে অভিনয় করেছেন কিয়ারা।
শেরশাহ ছবির প্রস্তুতির সময় ডিম্পল চিমার সঙ্গে সাক্ষাত্ করেছিলেন কিয়ারা। ডিএনকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে কিয়ারা জানিয়েছেন, ‘উনি নিজের জন্য এই জীবনটা বেছে নিয়েছেন, এবং উনি এটা ভেবেই খুশি রয়েছেন বিক্রম ওঁনার আশেপাশেই আছে, ওঁনার স্মৃতিতে ক্যাপ্টেন বিক্রম বত্রা অমর। এই বিষয়টা ওঁনাকে নিয়ে আপনাকে ভাবাবে। একটা সময় আমি মুখ ফসকে বলে ফেলেছিলাম, অনেক বছর তো কেটে গেল… উনি আমাকে পালটা বলেন ‘সেটা জরুরি নয়, আমি ওর উপর একটু রেগে আছি এটা ঠিক, কিন্তু যেদিন দেখা হবে সেদিন সব মনোমালিন্য একসঙ্গে বসে মিটিয়ে নেবো। আমি জানি ঠিক দেখা হবে….'।

এখন চণ্ডীগড়ের এক স্কুলে শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করছেন ডিম্পল চিমা। এখনও প্রতি বছর নিয়ম করে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে বিক্রমের বাবা-মা'কে ফোন করেন ডিম্পল। মিডিয়ার লাইমলাইট থেকে তিনি দূরে থাকতে চান। তাই 'শেরশাহ' ছবির কোনওরকম প্রমোশনমূলক অনুষ্ঠানে দেখা মেলেনি তাঁর। বিক্রমের স্মৃতি আগলে এইভাবেই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে চান তাঁর প্রেমি। ‘হীর-রাঞ্জা’, ‘লায়লা-মজনু’,'শিরি-ফরহাদ'-এর অমর প্রেম কতটা কল্পনা, কতটা বাস্তব তা জানা নেই, কিন্তু বিক্রম-ডিম্পলের এই প্রেম চিরন্তন,শাশ্বত…মৃত্যুও যে প্রেমের বাঁধন আগলা করতে পারেনি।