গত বছরের ১৪ মে হঠাৎই মাকে হারান 'মিঠাই'-এর ‘তোর্সা’ অর্থাৎ জনপ্রিয় অভিনেত্রী তন্বী লাহা রায়। তারপর থেকে মানসিক ভাবে ভীষণই ভেঙে পড়েছিলেন অভিনেত্রী। আজ এক বছর পর মায়ের ছবি বুকে আগলে সেই বিভীষিকাময় দিনের স্মৃতির কথা মনে করে ফের কলম ধরলেন নায়িকা।
অভিনেত্রী বুধবার মায়ের স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটি পোস্ট করেন। ছবিতে মায়ের ছবি হাতে নায়িকাকে গঙ্গার পাড়ে বসে থাকতে দেখা যায়। ফ্লোরাল প্রিন্টের হলুদ কুর্তি ও পালাজোয় নায়িকাকে দেখা গিয়েছে।
ছবিটি পোস্ট করে নায়িকা লেখেন, ‘আজ এক বছর কী করে হয়ে গেল তোমায় ছাড়া?! এখনও রোজ ভাবি, সকালে ঘুম থেকে তুলে দেবে, ফোন করে বার বার জিজ্ঞাসা করবে কখন ফিরবি? জল খা, টিফিন করেছিস? প্যাকআপ হবে এখন? ফেরার সময় কি বিরিয়ানি আনবি!? ভাবিছি ফোন আসছে না, কথা হল না, তখনই মনে পড়ে ওহ, তুমি তো নেই! আসলে এখনও বিশ্বাসই হয়না..'
তিনি আরও লেখেন, ‘এই তো কাল রাত থেকে খালি সময় দেখছি আর খালি মনে হচ্ছে যে, গত বছর এখনও তুমি ছিলে, তোমার পাশে হাত ধরে ছিলাম। জানলে আর একটু আটকে রাখতাম তোমায়, যেতে দিতাম না এতো তড়াতাড়ি। তুমি আমায় শক্ত হতে শিখেছ, কী করে মুখ বন্ধ কোরে কষ্ট সহ্য করতে হয়, আমাদের কথা ভেবে কখনও মুখে কিছু বলনি। আমি তোমার ড্রেসিং করে দেওয়ার সময় ভাবতাম কীভাবে ব্যথা যন্ত্রণার কথা বলতে না তুমি।’
তিনি লেখেন, 'মনে পড়ে আজ গত বছর যখন তুমি ছেড়ে চলে গেলে, নার্সরা যখন বলেছিল আপনারা একটু বের হন, ওঁকে মর্গের জন্য তৈরি করব। আপনারা কেউ এখানে থাকতে পারবেন না। আমি যখন জানতে চেয়েছিলাম কেন? ওঁরা বলে ছিল সব চেক হবে, সেটা আরওই নিতে পারবেন না। আমি বলেছিলাম আমি থাকবো রুমেই। সে জেদ নিয়েই এক পা নড়িনি তোমার পাশ থেকে। নিজেদের মুখ দেখাদেখি করে, আমাকে রেখেই ঘর লক করে দিল।'
তবে তখনও অভিনেত্রীর মধ্যে তাঁর মাকে ফিরে পাওয়ার কিছুটা আশা ছিল। তাঁর কথায়, ‘তোমায় ওঁরা কীভাবে শেষ চেক করল সেটাও দেখলাম। প্রথমেই ইসিজি করল, তখন ভাবলাম দেখাবো হয়তো এখনও তোমার হৃদস্পন্দন চলছে, সঙ্গে সঙ্গে কাগজটা বেরলো সোজা দাগ কাটা লাইন। তখন হাল ছেড়ে দিলাম, কিন্তু তোমার পাশ ছাড়িনি। তারপর তোমার নাক আর মুখ থেকে সব তরল বের করল, মানুষ চলে গেলে শেষে কী কী করে সেও দেখে নিলাম, তোমার পাশে বসে। তারপর তোমার বানানো শাড়িটা পরিয়ে সাজিয়ে দিলাম, ঠিক যেমন বলতে তন্নি একটা লিপস্টিক দে তো। শাড়ির কুচিটা ধর তো, সেফটিপিন দে, দেখ তো কেমন লাগছে? ঠিক তুমি যেমন আঙ্গুল কেটে দিতে আমিও তোমার আঙ্গুল কেটে দিলাম। মনে আছে? সেদিনও তোমায় সুন্দর লাগছিল মা..। আজও আমার ১৪.০৫.২০২৪ টা চোখের সামনে ভাসে মনে হয়।’
তারপরই ত্বণী মাকে প্রশ্ন করেন, 'এখন কেমন আছো খুব জানতে ইচ্ছে করে… তোমার মেয়ে আর আগের মতো শক্ত থাকতে পারে না মা, এই একটা বছরে কত মানুষ চিনলাম, কত কী দেখলাম। তুমি একটা কথা বলতে, জীবনে মা-বাবাই সব থেকে ভালো বন্ধু হয়, তাঁদের থেকে বেশি কেউ ভালোবাসে না। তুমি আশা করি সব দেখো, পাশেই আছো, তাই না মা? খুব ইচ্ছা করে তোমায় জড়িয়ে ধরি, কোলে মাথা রেখে ঘুমাই। কিন্তু এখন তোমার ছবি কোলে করে ঘুরি। খুব মিস করি। লাভ ইউ মা।'