আর পাঁচজন বলিউড তারকার থেকে যে অনেকটাই আলাদা ছিলেন সুশান্ত সিং রাজপুত সে নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই করোও। পর্দার বাইরে তাঁর বিভিন্ন কাজের মধ্যে দিয়ে সে পরিচয় তিনি দিয়েছিলেন। সুতরাং রুপোলি পর্দার নায়ক কিংবা একজন দক্ষ অভিনেতার থেকেও 'রিয়েল লাইফ'-এ করা তাঁর বিভিন্ন মানবিক কর্মকান্ডের জন্য অনেক বেশি করে অনুরাগীদের মনে জায়গা জুড়ে থেকে যাবেন তিনি।

সদ্য সামনে এল এমন আরও একটি উদাহরণ। টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তা জানালেন মুম্বইয়ের মিঠিবাঈ কলেজের ছাত্র ভূষণ কুমার। বছর কয়েক আগের ঘটনা। সেটা ২০১৭ সাল। ভূষণ তখন নবম শ্রেণীর ছাত্র। সেইসময়ে স্কুলে হঠাৎ একদিন এসে হাজির হন সুশান্তের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বিনয়। ছাত্রদের সঙ্গে গল্প আড্ডার ফাঁকে একটি পরীক্ষা নিয়েছিলেন তিনি। তাতে অংশগ্ৰহণ করেছিল ভূষণও। বেশ কিছু প্রশ্নের মধ্যে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল 'বড় হয়ে কী হতে চাও',' প্রিয় বিষয় কী' মার্কা কিছু প্রশ্ন। যথাসম্ভব জবাব দিয়েছিলেন ভূষণ। তখনই জানানো হয়েছিল পরীক্ষার বিজয়ীদেরর সঙ্গে নিজের দেখা করবেন সুশান্ত।

কথা দেখেছিলেন সুশান্ত। ওই প্রতিযোগিতায় স্থান পাওয়া প্রথম দশ, বারোজন প্রতিযোগীদের সঙ্গে দেখা করে খোশগল্পও করেছিলেন বিখ্যাত ওই বলি-তারকা। এ প্রসঙ্গে ভূষণ আরও বলেন,' আমি সুশান্তের নাম শুনেছিলাম বটে। কিন্তু ওঁর অভিনীত কোনও ছবি তখনও পর্যন্ত দেখে উঠতে পারিনি। জানতাম না এতবড় একজন বলি-তারকা তিনি। তাই ওঁর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার আগে 'রাবতা' ছবিটা দেখে ফেলেছিলাম ঝটপট। এরপর একটি নামকরা হোটেলে আমাদের কয়েকজনকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানেই অপেক্ষা করছিলেন সুশান্ত। জমিয়ে আড্ডা মারা ও ছবি তোলার পাশাপাশি নিজে আমাদের কিছু প্রশ্ন করেছিলেন উনি। আমি সেখানে একটি ভুল ফর্মুলা লিখে ফেলেছিলাম। নিজের হাতে তা কেটে আমাকে যত্ন করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ভুলটা কোথায় হয়েছিল আমার! যা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম আমি।'

এখানেই শেষ নয়। ভূষণ তখনও জানতেন না তাঁদের ওই প্রতিযোগিতায় প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানাধিকারীকে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-তে নিজের খরচে পাঠাবেন সুশান্ত। এরপর যখন তিনি জানতে পারলে তিনি সেই সুযোগ পেয়েছিলেন স্বাভাবিকভাবেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেছিলেন ভূষণ। যাওয়ার আগে সুশান্তের সঙ্গে দেখা করলেও নাসা থেকে ফিরে এসে আর দেখা হয়ে ওঠেনি বলি-তারকার সঙ্গে। যা ভাবলে আজও আফসোস হয় ভূষণের।

ভূষণ আরও জানিয়েছেন, মোট ১০০ জন ছাত্রকে নাসাতে পাঠানোর পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন সুশান্ত। তিনি এবং তাঁর স্কুলের বন্ধু সেলুইন মাকওয়ানা চিয়েলিন সেই ১০০ জনের মধ্যে প্রথম দু 'জন। সুশান্তের মৃত্যু যে তাঁকে গভীরভাবে নাড়িয়ে দিয়ে গেছে সেকথা জানাতে কোনও দ্বিধা করেননি ভূষণ। ভবিষ্যে একজন মহাকাশচারী হতে চান বলে জানিয়েছেন ভূষণ।
সুশান্ত যদি আজ বেঁচে থাকতেন এবং এই খবর যদি তাঁর কানে যেত, তিনি যে তাতে ভীষণ খুশিই হতেন সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না আর।